• পুজোয় লাফিয়ে বাড়ছে অনুদান, খরচের হিসাব কই
    আনন্দবাজার | ০২ আগস্ট ২০২৫
  • দুর্গাপুজো এলেই সরকারি অনুদান নিয়ে আলোচনা হয়। কেন সাধারণ মানুষের করের টাকা এ ভাবে খরচ করা হবে, তা নিয়ে মামলাও হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বছরের পর বছর সেই টাকা খরচের যথাযথ হিসাব জমা পড়ে না। অভিযোগ, অডিট ছাড়াই টাকা দেওয়া হয়। ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখে সিএজি রিপোর্ট দিক বলে আদালত নির্দেশ দিলেও তা মানা হয় না। হিসাব প্রতি বারই থেকে যায় অন্ধকারে। অভিযোগ, পুজোর পরে মামলাও চলে যায় ঠান্ডা ঘরে। এ বার ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে অনুদান ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশ্ন উঠেছে, এ বারও যথাযথ হিসাব মিলবে তো?

    ২০১৮ সালে ১০ হাজার টাকা করে পুজোর অনুদান দেওয়া শুরু করেছিল রাজ্য। ২০১৯-এ অনুদানের পরিমাণ ২৫ হাজার টাকা এবং করোনার সময়ে এক লাফে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়। ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে অনুদান ছিল যথাক্রমে ৬০, ৭০ ও ৮৫ হাজার টাকা। ২০১৮ সালেই এ নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। রাজ্যের পক্ষে আদালতে জানানো হয়, টাকা দেওয়া হচ্ছে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্পের প্রচারের জন্য। পরে অন্য মামলায় এই টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে শর্ত বেঁধে দেয় আদালত। বলা হয়, জনস্বার্থে টাকা খরচ করতে হবে।

    ২০২২ সালে পুজোর মুখে কলকাতা হাই কোর্ট ছ’টি শর্ত বেঁধে দেয়। ষষ্ঠ শর্তে বলা হয়, অনুদান ব্যয় সংক্রান্ত নথি হাই কোর্টে জমা দিতে হবে। তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল রাজ্যকে। কলকাতার দুর্গোৎসবকে ইউনেস্কোর ‘হেরিটেজ’ তকমা দেওয়ার কথা বলে রাজ্য জানায়, এটা গর্বের বিষয়। সংবিধানের ৫১ (এ) ধারা অনুযায়ী হেরিটেজ রক্ষার দায়িত্ব সব নাগরিকের। এর সংরক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হবে বলে রাজ্যের কাছে প্রত্যাশা থাকে। তাই অনুদান দেওয়া হয়। কিন্তু টাকা ঠিক কোন কোন খাতে খরচ হয়েছে, সেই তথ্য সামনে আসেনি তার পরেও।

    উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, অনুদান পুজোয় ব্যয় করা যায় না। প্রতিমা কেনা তো দূর, দশকর্মার ফর্দও ওই খাতে দেখানো যায় না। তাঁদের দাবি, যথাযথ হিসাব দেওয়ার ক্ষেত্রে এখানেই সমস্যা। নভেম্বরের মধ্যে খরচের হিসাব স্থানীয় থানায় জমা করার কথা। কী কী খাতে ওই টাকা খরচ করা যাবে, তার তালিকা পুলিশের তরফে আগেই দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা হয় মাঝারি ও ছোট পুজোর ক্ষেত্রে।

    উত্তরের এক উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘বয়স্ক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য পথ তৈরি, অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা, রক্ষী রাখার খরচ হিসাবেই বড় পুজোয় অনেকটা টাকা খরচ হয়। কিন্তু যাদের অনুদানই সম্বল, তাদের পক্ষে আলাদা খাতে খরচ দেখানোর সুযোগ নেই। বড় পুজো তো হাতে গোনা।’’ হাওড়ার এক মাঝারি পুজোর উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘করোনার সময়ে তবু মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারের খরচ দেখানো গিয়েছিল। তবে পুলিশ ও সরকার বোঝে, খুঁটিয়ে প্রশ্ন করা হয় না।’’ কিন্তু আদালত প্রশ্ন করলে? দক্ষিণের এক উদ্যোক্তার দাবি, ‘‘পুজো মিটলে ভাবা যাবে। অনুদান আসায় ব্যবসায়ীদের উপরে চাঁদার চাপ কমেছে। বললেই তাঁরা বিল তৈরি করে দেন।’’ সেই গোঁজামিলের বিলে কাজ হবে তো?

    ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বললেন, ‘‘বড় অংশের পুজো মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথে জনস্বার্থে অনুদান খরচ করে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)