• একজন পরিচালক, অন্যজন অভিনেতা, ছেলেদের ‘ইতিকথা’ দেখতে এসে কী বললেন দুই খ্যাতনামী বাবা
    আনন্দবাজার | ০২ আগস্ট ২০২৫
  • সন্ধ্যা সাতটা। দক্ষিণের শপিং মলের এক প্রেক্ষাগৃহের সামনে সাংবাদিক, ছবিশিকারীরা ইতস্তত ঘুরছেন। আমন্ত্রিত অতিথিরাও একে একে ঢুকছেন। এক সময় এলেন বাংলা নাট্যজগতের অন্যতম খ্যাতিমান প্রবীণ নাট্যপরিচালক ও অভিনেতা অরুণ মুখোপাধ্যায়। ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র বিশেষ ছবি প্রদর্শনে ‘চেতনা’ নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতাকে দেখে এগিয়ে এলেন অনেকে। শুক্রবার তাঁর বড় ছেলে সুমন মুখোপাধ্যায়ের ছবি মুক্তি পেয়েছে। দেখতে এসেছেন বাবা।

    লালচে পাঞ্জাবি আর চোস্ত পাজামা। এই ছিল বর্ষীয়ান অভিনেতার সাজ। ছবিশিকারীদের বায়না, ছেলের সঙ্গে বাবাকে ‘পোজ়’ দিতে হবে! হাসিমুখে সেই অনুরোধ রেখে ধীর পায়ে অরুণবাবু গা এলিয়ে দিলেন একটু দূরে সাজিয়ে রাখা মোটা গদির চেয়ারে। সুমন একাধিক কালজয়ী নাটকের সফল পরিচালক। সেই ছেলে যখন সিনেমা পরিচালনা করেন নাট্যব্যক্তিত্ব বাবা কি চাপা দুশ্চিন্তায় ভোগেন? প্রশ্ন ছিল আনন্দবাজার ডট কমের।

    স্মিত হেসে অরুণবাবুর দাবি, “লাল (সুমন) এর আগেও ছবি পরিচালনা করেছে। ফলে, ও তো নতুন নয়। তাই আর টেনশন হয় না। তা ছাড়া, ও পারে বলেই করে।” এও যোগ করলেন, ইদানীং অনেকেই একাধিক মাধ্যমে অনায়াসে কাজ করেন। যাঁরা এটা পারেন তাঁদের সেটাই করা উচিত। বাবার রক্ত ছেলের শরীরে। নাট্যপ্রেম তাই তাঁর জন্মগত।

    ছবি পরিচালনা যখন করেন তখন কি বাবার পরামর্শ নেন? বর্ষীয়ান নাট্যপরিচালক এবং অভিনেতা বললেন, “আলোচনা আমাদের মধ্যে সব সময়েই হয়। ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ পরিচালনার আগে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু আলোচনা করব বলে কথাবার্তা বলা, এ রকম হয় না আমাদের। ছোট ছেলে নীল (সুজন)-ও এ রকম আলোচনা করে।” ফলে, কালজয়ী উপন্যাসকে সুমন পর্দায় কী ভাবে দেখাতে চলেছেন সেই আগ্রহ প্রবল তাঁর। ছেলের পরিচালনায় ছবিতে কাজ করতে ইচ্ছে করে? “ছেলের পরিচালনায় ‘কাঙাল মালসাট’-এ অভিনয় করেছি। ভাল লেগেছে কাজ করে।”

    অরুণবাবু যখন ছেলের কাজ নিয়ে কথা বলছেন, তখনই প্রেক্ষাগৃহে পা রাখলেন আর এক খ্যাতনামী ছেলে আবীর চট্টোপাধ্যায়ের মা-বাবা রুমকি চট্টোপাধ্যায়-ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়। আবীর ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্র শশীর ভূমিকায়। এখনও কি আবীর ছবি মুক্তির দিন দুশ্চিন্তায় ভোগেন? “এখন তো আবীর পোড়-খাওয়া অভিনেতা! দুশ্চিন্তা ধারপাশেও ঘেঁষে না ওর। বরং আমাদের সামলায়।” জানিয়েছেন, এক বারই একটু ভয়ে পেয়েছিলেন আবীর। সে বার পুজোয় একসঙ্গে দুটো ছবি মুক্তি পেয়েছিল ওর। তার একটি ‘ব্যোমকেশ’। অভিনেতা তাঁর বাবার কাছে অনুরোধ করেছিলেন, “বাবা, আমার সঙ্গে প্রিমিয়ারে যাবে?” ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’য় ‘শশী’ চরিত্রে ছেলে অভিনয় করবে শুনে খুব খুশি মঞ্চ এবং পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা বাবার।

    বাবা-ছেলে মঞ্চে কখনও ধরা দেবেন না? হাসলেন ফাল্গুনীবাবু। যুক্তি দিলেন, “মঞ্চে অভিনয় আবীরের পক্ষে আর সম্ভব নয়। তা ছাড়া, ও মঞ্চাভিনেতাও নয়। আর পর্দায় আমাদের একসঙ্গে কাজ করা নির্ভর করছে পরিচালকের উপরে। কোনও পরিচালক বাবা-ছেলেকে নিয়ে কাজে আগ্রহী হলে অবশ্যই করব।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)