• ‘রাষ্ট্রবিরোধী ও অসাংবিধানিক’, বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ তকমায় ক্ষুব্ধ মমতা, প্রতিবাদ শিল্পী মহলেও
    এই সময় | ০৪ আগস্ট ২০২৫
  • নেপথ্যে দিল্লি পুলিশের একটি চিঠি। যেখানে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ বলে লেখা হয়েছে বলে দাবি করছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিষয়টি নিয়ে সর্বস্তরে প্রতিবাদের ডাক দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লি পুলিশের বক্তব্যকে ‘অপমানজনক’, ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ ও ‘অসাংবিধানিক’ বলে দাবি করেছেন মমতা। মমতার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে সরব হয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শিল্পী মহলেও বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। যদিও ‘বাংলাদেশি’ ভাষা বলা নিয়ে কোনও আপত্তি দেখছে না বঙ্গ বিজেপি।

    তৃণমূলের তরফে দিল্লি পুলিশের একটি চিঠি (যাচাই করেনি এই সময় অনলাইন) সামনে আনা হয়েছে। দিল্লি পুলিশ চিঠি পাঠিয়েছে বঙ্গ ভবনের অফিসার ইন-চার্জকে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নয়াদিল্লির লোধা কলোনিতে আট জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকেই পাওয়া পরিচয় পত্র, জন্ম সার্টিফিকেট, ব্যাঙ্কের বেশ কিছু নথিতে ‘বাংলাদেশি’ ভাষা লেখা রয়েছে বলে দাবি দিল্লি পুলিশের। বঙ্গ ভবনের কাছে বাংলাদেশি ভাষায় দক্ষ ট্রান্সলেটর/ইন্টারপ্রেটার চাওয়া হয়। এখানেই আপত্তি তৃণমূলের। বাংলা ভাষাকে কেন ‘বাংলাদেশি’ ভাষা বলা হচ্ছে, প্রশ্ন তৃণমূলের।

    এক্স হ্যান্ডলে মমতা বলেন, ‘যে ভাষায় কোটি কোটি ভারতীয় কথা বলেন এবং লেখেন, যে ভাষা ভারতের সংবিধান দ্বারা পবিত্র এবং স্বীকৃত, তাকে এখন বাংলাদেশি ভাষা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে! এটা কলঙ্কজনক, অপমানজনক, রাষ্ট্রবিরোধী ও অসাংবিধানিক!’ এর পরেই বিষয়টি নিয়ে জোরদার প্রতিবাদের ডাক দেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘আমরা সকলের কাছ থেকে ভারতের বাঙালি-বিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তীব্র প্রতিবাদের আহ্বান জানাচ্ছি। যারা ভারতের বাংলাভাষী জনগণকে অপমান করার জন্য এই ধরনের সংবিধান বিরোধী ভাষা ব্যবহার করছে।’

    বিষয়টি নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে সরব হন তৃণমূল সাংসদ অভিষেকও। তিনি লেখেন, ‘এটি সংবিধানের ৩৪৩ অনুচ্ছেদ এবং অষ্টম তফসিলের সরাসরি লঙ্ঘন। বাংলাদেশি বলে কোনও ভাষা নেই। বাংলা ভাষাকে বিদেশি ভাষা বলা কেবল অপমান নয় — এটি আমাদের পরিচয়, সংস্কৃতি এবং সত্তার উপরে আক্রমণ। বাঙালিরা তাদের নিজস্ব মাতৃভূমিতে বহিরাগত নয়।’ অবিলম্বে দিল্লি পুলিশের আধিকারিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক বলে দাবি করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে।

    বিষয়টি নিয়ে সরব হতে শুরু করেছে শিল্পী মহলও। শিল্পী রূপম ইসলাম এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘এটা কী? ভারতের ২২টি সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা নেই? এটাকে কেন বাংলাদেশি ভাষা বলা হলো? এটা অজ্ঞতা ও মূর্খতার উদাহরণ।’ তবে বিষয়টিতে কোনও ভুল দেখছে না রাজ্য বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘একদম ঠিকই লেখা হয়েছে। আপনি বাংলাদেশের একটা বই এনে পড়ুন। আর পশ্চিমবঙ্গের একটা বই এনে পড়ুন। আপনারা বুঝতে পারবেন, কোনটা সুবোধ সরকার লিখেছেন, আর কোনটা বাংলাদেশের সফিকুল ইসলাম লিখেছেন। ওই ভাষাটা পড়লেই বোঝা যায়।’

    দিল্লি পুলিশ কোথায় মস্ত বড় ভুল করেছে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এক সিনিয়র আইনজ্ঞ। তিনি বলছেন, ‘দি বাংলাদেশি ভাষায় লেখা কোনও নথি পুলিশ ভেরিফাই করতে চাইত, তা হলে তো তারা এই চিঠিটা দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠাতে পারত। তারা বাংলা বা বাঙালি বোঝাতে চেয়েই চিঠি দিয়েছে বঙ্গ ভবনে। সে ক্ষেত্রে চিঠিতে বাংলাদেশি ভাষা না লিখে তাদের বাংলা ভাষা লেখা উচিত ছিল।’ এতে দিল্লি পুলিশ সংবিধানের অমর্যাদা করেছে বলে দাবি তাঁর।

  • Link to this news (এই সময়)