• দুর্যোগে ‘ত্রাতা’ বট-পাকুড়ের বিয়ে, কব্জি ডুবিয়ে খেলেন তিস্তার বাঁধের বাসিন্দারা!
    বর্তমান | ০৪ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: দুর্যোগে ‘ত্রাতা’ বট-পাকুড়! সেই কারণে শিব-পার্বতী জ্ঞানে তাদের বিয়ে দিলেন তিস্তার বাঁধের বাসিন্দারা। পুরোহিত ডেকে, মন্ত্রোচ্চারণ, হোম-যজ্ঞ করে গাছের বিয়ে দেওয়া হল জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া দক্ষিণ সুকান্তনগরে। গাছ যেমন তাঁদের রক্ষা করছে, তেমনই তাঁরাও বুক দিয়ে আগলে রাখবেন গাছকে। এই বট-পাকুড়ের বিয়েতে এমনই শপথ নিলেন বাঁধের বাসিন্দারা। আর তাই গাছের বিয়েতে দায়িত্ব ভাগ করে নিলেন এলাকার প্রায় প্রত্যেকেই। ধূমধাম করে বিয়ে শেষে ছিল খাওয়াদাওয়ারও আয়োজন। তাতে কব্জি ডুবিয়ে খেলেন এলাকার প্রায় হাজার খানেক বাসিন্দা। গাছ রক্ষায় তিস্তার বাঁধের বাসিন্দাদের এমন উদ্যোগে খুশি পরিবেশপ্রেমী থেকে বনদপ্তরের আধিকারিকরাও।দক্ষিণ সুকান্তনগর এলাকার বাসিন্দা বিনোদ রায় বলেন, গত বছর আমাদের এখানে ভয়ঙ্কর ঝড় হয়। বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একজনের মৃত্যুও হয়। কিন্তু যেখানে বট-পাকুড় গাছ দুটি রয়েছে, সেখানে তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এটা দেখার পর থেকেই আমরা ওই দুটি গাছের পুজো শুরু করি। অবশেষে শিব-পার্বতী জ্ঞানে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। এই গাছের বিয়েতে তিস্তার বাঁধের বাসিন্দারা প্রায় প্রত্যেকেই অংশ নিয়েছেন। বট-পাকুড়ের বিয়েতে পুরোহিত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, চারদিকে গাছ কেটে কংক্রিটের ইমারত হচ্ছে। জঙ্গল সাফ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে তিস্তার বাঁধের বাসিন্দারা যে গাছ রক্ষা করতে চেয়ে বট-পাকুড়ের বিয়ে দিচ্ছেন, এটা খুবই ভাল বিষয়।গাছের বিয়েতে পাত্রপক্ষের অভিভাবক হিসেবে ছিলেন পেশায় দিনমজুর শ্রীকান্ত রায়। তিনি বলেন, নদীর পাড়ে বাস করি। তিস্তায় জল বাড়লেই ভয়ে বুক দুরুদুরু হয়। তার উপর গত বছর এলাকায় মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ও হয়। কিন্তু এই গাছ সমস্ত দুর্যোগ থেকে আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস। মূলত সেই কারণে দুটি গাছের বিয়ে দিয়ে আমরা তাদের রক্ষার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিলাম। অন্যদিকে, ‘পাত্রী’ পক্ষের দায়িত্ব নেন এলাকার বাসিন্দা সাগর সরকার। তাঁর বক্তব্য, হোক না গাছ। ‘মেয়ে’-র বিয়ে বলে কথা। বাজারে গিয়ে নিজে হাতে বিয়ের কাপড় কিনেছি। এই গাছ দুটি আমাদের সন্তানের মতো হয়েই থাকবে।
  • Link to this news (বর্তমান)