• ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেবে! আতঙ্কে আত্মঘাতী ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ
    বর্তমান | ০৪ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভোটার তালিকার ইন্টেনসিভ রিভিশন এবার কেড়ে নিল প্রাণও! গত কয়েকদিন ধরেই ভোটার তালিকার ইন্টেনসিভ রিভিউ রয়েছে চর্চায়। আর এই চর্চার সঙ্গে প্রতিদিন বাড়ছে আতঙ্ক—এনআরসির, ডিটেনশন ক্যাম্পের। নাগরিকত্ব চলে যাবে না তো? ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিলে...? যদি বাংলাদেশে পুশব্যাক করে? এমনই আতঙ্কে শনিবার রাতে আত্মঘাতী হলেন কুঁদঘাট এলাকার বাসিন্দা দিলীপ কুমার সাহা। বয়স হয়েছিল তাঁর ৬১ বছর। তীব্র মানসিক অবসাদে তিনি গলায় ফাঁস দিয়েছেন বলে দাবি মেয়ে পিঙ্কি সাহার। রবিবার সকালে দরজা ভেঙে তাঁর দেহ উদ্ধার করেছে রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিস। অকুস্থলে মিলেছে সুইসাইড নোটও। দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে।

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, কুঁদঘাটের চাকদা আনন্দপল্লির বাসিন্দা দিলীপবাবু ঢাকুরিয়ায় একটি বেসরকারি স্কুলে কর্মরত ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি স্নায়ুর রোগে ভুগছিলেন। নিয়মিত ওষুধ খেতে হতো তাঁকে। মেয়ে পিঙ্কি সাহা বলেন, ‘১০ দিন ধরে বাবা স্কুলে যাচ্ছিল না। বাইরে বেরনো তো দূর, বাড়ির কারও সঙ্গে তেমন কথাও বলেনি। শনিবার রাতে নিয়মমাফিক খাওয়া-দাওয়ার পর নিজের ঘরে শুতে চলে যায়। ওই ঘরে বাবা একাই থাকত। মা, আর আমি অন্য ঘরে শুয়ে পড়ি। রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ মা ডাকতে গিয়ে দেখে, ঘর ভিতর থেকে বন্ধ। অন্যদিন কিন্তু দরজা খোলাই থাকত। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরও সাড়া না পেয়ে মা আমাদের ডাকে। তখনই খবর দেওয়া হয় থানায়।’ পুলিস এসে দরজা ভেঙে ঢুকে সিলিংয়ে ঝুলম্ত অবস্থায় দিলীপবাবুর দেহ উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে লেখা, তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। অবসাদের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হলেন তিনি।

    পরিবারের দাবি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের ঠিক পর পরই পরিবার নিয়ে এপারে চলে আসেন দিলীপবাবু। ঘর বাঁধেন রিজেন্ট পার্ক এলাকায়। পাকাপাকি বসবাস শুরুর পর পশ্চিমবঙ্গেই তাঁর এবং বাড়ির লোকেদের যাবতীয় পরিচয়পত্র ও নথি তৈরি হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় এপারে আসা বাঙালিদের কোনও সমস্যা হবে না জানার পরও অবশ্য স্বস্তি ছিল না তাঁর। এনআরসি, এসআইআর, ডিটেনশন ক্যাম্পের খবর পড়ার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মেয়ে পিঙ্কির দাবি, বাবা বারবার বলতেন, এনআরসি হলে আমাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেবে। জেল হয়ে যাবে। বাংলাদেশে পুশব্যাক করে দেবে। এই অবসাদ নিতে পারেননি। এর জেরেই আত্মহত্যা।

    বাংলা-বাংলাদেশি ইস্যুতে গোটা দেশেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। তার মধ্যে আত্মহত্যার এই ঘটনা আগুনে ঘৃতাহুতি করল। এদিন তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘একের পর এক বাঙালি হিন্দুর কাছে এনআরসির নোটিস আসছে। কলকাতার বাসিন্দা আত্মঘাতী হয়েছেন। বিজেপি যেভাবে বাঙালি জাতির উপর আক্রমণ শুরু করেছে, বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও এনআরসির নোটিস পাঠাচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।’ এদিন সন্ধ্যায় দিলীপ সাহার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তাঁদের কুঁদঘাটের বাড়ি যান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পরিবারের আক্ষেপ একটাই... মানুষটা আর ফিরে আসবে না! -ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)