• খোয়াই হাট সংলগ্ন যুবতীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার, চাঞ্চল্য
    বর্তমান | ০৮ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: বৃহস্পতিবার সাতসকালে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবতীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল  শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি খোয়াই এলাকায়। স্থানীয়রা সোনাঝুরির জঙ্গলে একটি ছোট গাছের তলায় দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন। খবর দেন পুলিসে। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন শান্তিনিকেতন থানার ওসি ডলি মণ্ডল। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে ঘটনাস্থলটি ঘিরে দেয় পুলিস। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে জোর তদন্ত-তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিস। এদিকে, ঘটনাটি চাউর হয়ে যেতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে পর্যটক মহলে। জেলা পুলিস সুপার আমনদীপ সিং বলেন, ‘ওই যুবতীর পরিচয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে কারা যুক্ত, তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবতীর বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। চোখ-মুখ রক্তাক্ত। আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। গলায় কিছু একটা দিয়ে প্যঁচানোর দাগ।  ছোট একটি সোনাঝুরি গাছের সঙ্গে গলায় ওড়না বাঁধা অবস্থায় দেহটি পড়েছিল। পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, ওই যুবতীকে অন্যত্র খুন করে গাড়িতে এনে নির্জন এলাকায়  নিয়ে আসা হয়। তার পর টেনে হিঁচড়ে গাছের নিচে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে গাড়ির চাকার দাগও লক্ষ্য করেছে পুলিস। তদন্তকারীদের ধারণা, গাড়ি থেকে দেহটি নামিয়ে রাতের অন্ধকারে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসা এমন সব তথ্য পেয়ে পুলিসের সন্দেহ, এটি পরিকল্পিত খুন। সেই সঙ্গে ধর্ষণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বোলপুর মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হবে বলে পুলিস জানিয়েছে।

    রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রের অন্যতম ঠিকানা শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি হাট। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম হয়। সেখানে তরতাজা এক যুবতীর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বিগ্ন সকলেই। তাৎপর্যপূর্ণভাবে যে জায়গায় দেহটি উদ্ধার হয়েছে, সেখান থেকে কয়েকশো মিটার দূরেই শান্তিনিকেতন থানার পুলিস ক্যাম্প। তাদের নজরদারির এড়িয়ে কীভাবে গাড়ি নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে খুনের পর দেহ ফেলা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

    ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পুলিস। সেই ফুটেজ থেকে পুলিস নিশ্চিত হতে চাইছে, কোন গাড়ি, কখন সোনাঝুরি এলাকায় প্রবেশ করেছে। সোনাঝুরির লাগোয়া হোটেল, রিসর্ট, রেস্তোরাঁগুলিতেও যুবতীর পরিচয় জানতে খোঁজখবর করছেন তদন্তকারীরা। 

    বনভূমিতে গড়ে ওঠা এ সোনাঝুরি হাট নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত ইতিমধ্যেই জাতীয় পরিবেশ আদালতে অভিযোগ জানিয়েছেন। তার প্রেক্ষিতে আদালত রাজ্য সরকারের কাছে হলফনামাও চেয়েছে। সেই আবহে এই নারকীয় খুনের ঘটনা শান্তিনিকেতনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আরও বিতর্ক বাড়িয়ে দিল বলে মনে করা হচ্ছে। সোনাঝুরি হাট কমিটির সম্পাদক তন্ময় মিত্র বলেন, ‘হাট সংলগ্ন জঙ্গলে এক যুবতীর রক্তাক্ত মৃদেহ পড়ে থাকার খবর শুনে ঘটনাস্থলে যাই। মৃতার মুখে আঘাত ও গলায় ওড়না বাঁধা ছিল।’ 

    সোনঝুরি এলাকায় এখনও সেভাবে নজরদারি নেই। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কী দুষ্কৃতীরা যুবতীর দেহটি ফেলে রাখার জন্য বেছে নিয়েছে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শান্তিনিকেতন। স্থানীয়দের দাবি, এই নির্জন এলাকায় পুলিস যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করে, তা হলে ক্রমেই দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠবে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)