• বিচারব্যবস্থা রক্ত পিপাসু হলে চলে না: কলকাতা হাইকোর্ট
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৮ আগস্ট ২০২৫
  • ‘বিচারব্যবস্থা রক্তপিপাসু হলে চলে না!’ জলপাইগুড়ির একটি খুনের মামলায় ফাঁসির সাজা খারিজ করে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এই রায়ে আলোড়ন ছড়িয়েছে বিচার মহলে। খবরে প্রকাশ, জলপাইগুড়ির একটি পারিবারিক খুনের মামলায় ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল নিম্ন আদালত। উচ্চ আদালত সেই রায় খারিজ করে দিতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে নানা মহলে। হাইকোর্ট জানিয়েছে, সাজা প্রতিশোধের কথা ভেবে নয়, সংস্কারের কথা ভেবে দিতে হবে। অপরাধীকে নয়, অপরাধকে ঘৃণা করতে হবে।

    উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ‘সমাজের একটি রক্তপিপাসু অংশের মধ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার মৌলিক প্রবৃত্তি রয়েছে। আমরা সেই স্তর থেকে উন্নত পর্যায়ে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি। অপরাধী নয়, অপরাধকে ঘৃণা করুন।’ ডিভিশন বেঞ্চের আরও বক্তব্য, আধুনিক চেতনায় কারাগার সংশোধনাগারে পরিবর্তিত হয়েছে। কারণ, সেখানে অপরাধী শুধুমাত্র শাস্তি ভোগই করেন না, হরেক কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর আচরণ পরিবর্তনেরও চেষ্টা করা হয়ে থাকে।

    আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল মামার বাড়ি ডাকাতির উদ্দেশ্যে গিয়েছিল ভাগ্নে আফতাব। সেখানে মামা ও মামিকে আফতাবের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় জলপাইগুড়ি জেলা আদালত অভিযুক্ত যুবক আফতাব আলমকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল। বাবার মৃত্যুর পর মামার কাছেই বড় হয়েছেন আফতাব। অথচ সেই মামার সঙ্গে কী ভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন, সেই প্রশ্ন তুলে ওই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ উল্লেখ করেছিলেন নিম্ন আদালতের বিচারক। আফতাবকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিলেন বিচারপতি। অবশেষে হাইকোর্ট সেই রায় খারিজ করে দিল।

    নিম্ন আদালতের সেই রায় খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি উদয় কুমারের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, বিশ্বাসঘাতকতা ফাঁসির সাজার জন্য যথেষ্ট নয়।  নিম্ন আদালত তথ্যপ্রমাণের দিকে না তাকিয়ে বেশি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিল। আর যে বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলা হচ্ছে, তা-ও কতটা যথোপযুক্ত, উচ্চ আদালত তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। তাঁদের বক্তব্য, আফতাব দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁর মামার সঙ্গে থাকছিলেন না। তিনি দিল্লি চলে গিয়েছিলেন। ফলে বিশ্বাসভঙ্গের যুক্তি এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয় বলেই মনে করেছেন বিচারপতিরা।

    প্রসঙ্গত, আরজি কর কাণ্ডে তোলপাড় হয়েছিল গোটা রাজ্য। এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির দাবি তুলেছিল বিভিন্ন মহল। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ খুনে শিয়ালদহ আদালতে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বিচারক অনির্বাণ দাস তাঁকে ফাঁসির বদলে আজীবন কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই আবহে জলপাইগুড়ির খুনের মামলায় বুধবার হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বিচারব্যবস্থা নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনার জন্ম দিয়েছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)