এই সময়: আধপেটা খেয়ে, শীত-বর্ষায় ভাঙা ঘরে কোনও রকমে মাথা গুঁজে থেকেও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছেন বছরের পর বছর। অবশেষে সেই লড়াইয়ে জয়ের ফলে একটু হলেও হয়তো হাল ফিরতে চলেছে অরুণা ও কালাচাঁদ ঘটক, দিদি-ভাইয়ের সংসারে।
পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার অজয় তীরবর্তী বাঁদরা গ্রামের ঘটক পরিবারের লড়াইয়ের কথা গত ২ জুলাই প্রকাশিত হয়েছিল ‘এই সময়’-এ। ১৯৮১-তে সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী শচীপতি ঘটকের মৃত্যুর পরে তাঁর অবসরকালীন প্রাপ্যটুকুও পায়নি পরিবার। ফ্যামিলি পেনশন থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন শচীপতির স্ত্রী ভক্তিরানি। অতিকষ্টে দিনযাপন করে তিনিও মারা যান কয়েক বছর আগে। ন্যায্য আদায়ে লড়াইটা অবশ্য ছাড়েননি অরুণা-কালাচাঁদ।
বিস্তর চিঠিচাপাটি, তার পর প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, লোকায়ুক্ত হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চে মামলা হয়। অরুণারা সিঙ্গল বেঞ্চে জিতলেও সরকারের মন গলেনি। ডিভিশন বেঞ্চে মামলা নিয়ে যায় রাজ্য। সেখানেও জিতেছেন দিদি-ভাই। তার পরেও সরকারি তরফে যোগাযোগ করা হয়নি। আদালত অবমাননা মামলার প্রথম শুনানির পরে অবশেষে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে অরুণা–কালাচাঁদকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, আদালতের রায় মেনে মেটানো হবে শচীপতির অবসরকালীন প্রাপ্য এবং ফ্যামিলি পেনশন চালু হবে শচীপতির বিধবা কন্যা অরুণার নামে। ওই চিঠিতেও শচীপতির চাকরিজীবন নিয়ে তথ্যের অসঙ্গতি অবশ্য চোখ এড়ায়নি অরুণাদের হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে মামলা লড়া আইনজীবীদের। অবমাননা মামলার পরবর্তী শুনানিতে সে প্রসঙ্গ উঠবে। তবে এক অসহায় ভাই-বোনের হার না-মানা লড়াইয়ের কাছে সরকারের নতিস্বীকার কম তাৎপর্যপূর্ণ নয় বলেই মনে করছেন আইনজীবীরা।
কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স-চালক শচীপতি কর্মরত অবস্থায় পক্ষাঘাতের শিকার হন। ১৯৮১-র ২৮ ডিসেম্বর স্ত্রী, পুত্র-কন্যাকে রেখে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পরে ছেলে কালাচাঁদের ১৮ বছর হলে কমপ্যাসনেট গ্রাউন্ডে তাঁর চাকরি চেয়ে ’৮৩-তে স্বাস্থ্য দপ্তরে আর্জি জানান বিধবা ভক্তিরানি। ’৮৪–তে বিষয়টি রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তার দরবারে পৌঁছলেও ধামাচাপা পড়ে যায়। কালাচাঁদ–অরুণার নিরন্তর ছোটাছুটির পরে ২০০৮-এ বর্ধমানের সিএমওএইচ পরিবারটির অর্থনৈতিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়েন। তার পরে আবারও সব বিশ বাঁও জলে! বিষয়টি গড়ায় আদালতে। ইতিমধ্যে ভক্তিরানি মারা গিয়েছেন। বয়সের কারণে কালাচাঁদের চাকরির সুযোগও শেষ। শচীপতির অবসরকালীন প্রাপ্য মেটাতে ও ফ্যামিলি পেনশন চালু করতে ২০২৩-এর ২১ অগস্ট নির্দেশ দেন সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। গত ১২ জুন সেই রায়ই বহাল রাখে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রর ডিভিশন বেঞ্চ।