• ভূত ঢুকেছে স্কুলে, গুজবে ক্লাসে যেতে ভয় রায়গঞ্জের এক স্কুলের পড়ুয়াদের
    এই সময় | ০৮ আগস্ট ২০২৫
  • এই সময়, রায়গঞ্জ: মাসখানেক আগে মারা গিয়েছিল এক ছাত্রী। তার স্মরণে স্কুল চত্বরে লাগানো হয় একটি আমগাছ। এর সঙ্গে টাঙানো হয় ছাত্রীর ছবি। এরপর থেকেই নাকি অসুস্থ হয়ে পড়ছে অন্য ছাত্রীরা। অনেকে আতঙ্কে স্কুলে যেতে চাইছে না। একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, ভূতের ভয় পাচ্ছে মেয়েরা। এর ফলে স্কুল প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়। এক পীরকে এনে ঝাড়ফুঁক করানো হয়েছে বলে অভিভাবকদের দাবি।

    সময়টা একুশ শতক। মোবাইল ফোন হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে দুনিয়াকে। তবু ভূতপ্রেত, ওঝা, তন্ত্রমন্ত্রের 'ভূত' সমাজের মাথা থেকে নামেনি। সে কারণেই এখন নজরে উত্তর দিনাজপুর জেলার ইটাহার ব্লকের সুরুন-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বাড়িওল রইসুদ্দিন আহামেদ হাই স্কুল। যদিও স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভূতের আতস্ককে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। গুজব না ছড়াতে অনুরোধ করেছেন তিনি। ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিং করে আতঙ্ক কাটাতে উদ্যোগ নিয়েছে বিজ্ঞান মঞ্চ।

    অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীটি মারা গিয়েছিল শ্বাসকষ্টে ভুগে। প্রিয় ছাত্রীর মৃত্যুর পরে এক স্কুল শিক্ষক গাছ লাগান তার স্মরণে, সঙ্গে একটি ছবি। পড়ুয়ার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখাই ছিল উদ্দেশ্য, কিন্তু সেই স্মৃতিচিহ্নই পরিণত হয় আতম্বের উৎসে। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, এর পর থেকে পড়ুয়াদের মধ্যে ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে ভুতের আতঙ্ক। তাদের ধারণা, গাছের চারপাশে মৃত ছাত্রীর আত্মা ঘুরে বেড়ায়। সপ্তাহখানেক আগে আরও এক ছাত্রীর মৃত্যু আতঙ্ক বাড়িয়েছে।

    এক ছাত্রীর কথায়, 'গাছ আর ছবি লাগানোর পরেই মৃত ছাত্রীর যারা বন্ধু ছিল, প্রত্যেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবাই বলছে, ওই মেয়েটি ওর বন্ধুদের কাছে ফিরে আসছে। তাই আমাদের ভয় লাগছে স্কুলে যেতে। রাতে পীরবাবা এসে ঝাড়ফুঁক করেছেন।' অভিভাবক নেহারুল হক বলেন, 'স্কুলে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করছে মেয়েরা, অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অন্য এক ছাত্রী ক'দিন আগে মারা যাওয়ায় ভয় আরও বেড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এক পীরকে এনে স্কুলে ঝাড়ফুঁক করানো হয়েছে।' অভিভাবক আসরেমান বিবি বলেন, 'আমার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। এখন স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। শিক্ষকদের জানিয়েছি।' ওই অভিভাবকও দাবি করেছেন, তন্ত্রমন্ত্রের সাহায্যে 'ভূত তাড়ানোর চেষ্টা চলছে।'

    বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির সভাপতি ইসরাফুল হক স্বীকার করেছেন, একটা ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, 'এক শিক্ষক মেয়েটির ছবি এঁকেছিলেন, সেটি টাঙানো হয়। তারপর থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে বলে জানতে পেরেছি। মৌলবী সাহেবকে ডেকে নিয়ে এসেছিলাম। উনি স্কুলটাকে 'বাঁধন' দিয়ে দিয়েছেন।' যদিও স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামিজ আলম গোটা বিষয়টিকে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, 'স্কুলে এ ধরনের কোনও আতঙ্ক নেই। এখন স্কুলে পরীক্ষা চলছে। ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার স্বাভাবিক রয়েছে। ছাত্রীদের মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক, অসুস্থতার কারণে তারা মারা গিয়েছে। ভূতের আতঙ্ক বলে কিছু নেই, আর ঝাড়ফুঁকের বিষয়টিও সত্য নয়। পীরকে নিয়ে আসার ব্যাপারেও আমার কিছু জানা নেই। এ সমস্ত গুজব ছড়ানো হচ্ছে।'

    পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি অনিরুদ্ধ সিনহা বলেন, 'এই গুজবের সূত্রপাত হয়েছে ছাত্রী মৃত্যুর স্মরণে গাছ লাগানো ও ছবি বসানোকে ঘিরে। ঘটনার খবর পেয়ে ওই এলাকায় গিয়ে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছি। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিং করে এই আতঙ্ক দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গেও কথা বলেছি। ভূতপ্রেত, ঝাড়ফুঁকের কুসংস্কার দূর করতে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতার প্রচার করা হবে।'

  • Link to this news (এই সময়)