• ভাষার ‘লড়াইয়ে’ রবীন্দ্র-প্রসঙ্গ এনে দ্বন্দ্বে মমতা-শুভেন্দু
    আনন্দবাজার | ০৮ আগস্ট ২০২৫
  • বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের ‘হেনস্থা’র প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি-বিজড়িত বোলপুর থেকে ‘ভাষা আন্দোলন’ শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার কবির প্রয়াণ দিবসে ‘ভাষার লড়াইয়ে’ রবীন্দ্রনাথকেই প্রেরণা বলে উল্লেখ করে বিজেপির উদ্দেশে সরব হলেন মমতা। এই প্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ সংক্রান্ত বিষয়ে মমতা যে একদা ‘ভুল’ তথ্য দিয়েছিলেন, তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেই বাংলা ভাষা ও বাঙালির সর্বনাশের মূল বলে পাল্টা সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

    রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী সমাজমাধ্যমে বলেছেন, ‘বাংলা ভাষা বলার জন্য বাঙালির উপরে যখন সন্ত্রাস নেমে আসছে, তখন রবীন্দ্রনাথই লড়াইয়ের প্রেরণা। আমরা ভাষা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছি। এই লড়াইয়ের পথে রবীন্দ্রনাথই পথনির্দেশক।’

    সম্প্রতি সিলেটি-সহ বিভিন্ন প্রসঙ্গের উল্লেখ করে বিজেপির আইটি শাখার প্রধান অমিত মালবীয় দাবি করেছিলেন, ‘বাংলা বলে এমন কোনও ভাষা নেই, যা এই রূপভেদগুলিকে ধরতে পারে’! এই সূত্র ধরেই ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবসে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সরব হয়েছেন মমতা। তিনি ১৯১২ সালের ১০ টাকার একটি নোটের ছবি মোবাইলে দেখিয়ে বলেছেন, “১৯১২-র নোটেও বাংলায় লেখা আছে। অপদার্থেরা ২০২৫-এ বলছে, বাংলা বলে কোনও ভাষা নেই! এত পুরনো, ঐতিহ্যশালী ভাষা। হিন্দি ছিল না। হিন্দি থাকুক, অপত্তি নেই।” এর সঙ্গেই বাংলাকে কেন্দ্র যে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে, তা এত দেরিতে কেন, সেই প্রশ্নও ইঙ্গিতে তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, “ধ্রুপদী ভাষার জন্য এত বই পাঠিয়েছি। সবাই ধ্রুপদী ভাষা পেয়েছে। বাংলা সব চেয়ে পুরনো ভাষা! বাংলা পায়নি।”

    এর পাল্টা রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে মমতার অতীত-মন্তব্যকে হাতিয়ার করেছেন বিরোধী দলনেতা। গড়িয়া মোড় থেকে রানিকুঠি মোড় পর্যন্ত দলের ‘কন্যাসুরক্ষা যাত্রা’য় যোগ দিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, “বাঙালিদের সর্বনাশের মূলে উনি (মমতা)! ওঁর লেখা ‘এপাং ওপাং ঝপাং’ কবিতাগুলো বাংলা ভাষা? ভাষার দফারফা করেছেন! রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়েছিল ১৯৪১-এ। কিন্তু উনি বলেছিলেন, ১৯৪৭-এ বেলেঘাটায় গান্ধীর অনশন ভাঙিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলার সংস্কৃতি জানলে, এটা বলতেন না।” পাশাপাশি, ‘আনসারুল্লা বাংলা টিমে’র ধৃত জঙ্গি শাব শেখ বাংলায় কথা বলত, সে কথা জানিয়ে শুভেন্দুর সংযোজন, “দেশভাগের বিভীষিকা নিয়ে পূর্ববঙ্গ থেকে এখানে আসা হিন্দুদের জিজ্ঞাসা করুন, যাঁরা তাড়িয়েছিল, তাঁরা কোন ভাষায় কথা বলতেন?” তৃণমূলের মিছিলে ইদানীং যেমন বাঙালি মনীষীদের ছবি দেখা যাচ্ছে, সেই প্রেক্ষিতে এ দিন বিজেপির মিছিলেও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, স্বামী প্রণবানন্দ প্রমুখের ছবি ছিল।

    পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ভাষাগত ‘প্রভেদে’র কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী রোহিঙ্গা এবং অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন করছেন বলে বিজেপি লাগাতার আক্রমণ করছে। এই প্রেক্ষিতে মমতার ফের বক্তব্য, “বাংলায় কথা বললে বলছে, রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি। রোহিঙ্গা খায় না মাথায় দেয়! ওটা তো মায়ানমার, আলাদা দেশ, আলাদা ভাষা। নতুন করে মনে হচ্ছে, আমরা স্বাধীন? আমার স্বাধীন থাকতে চাই।”

    এর পাশাপাশি দিল্লি যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে এ দিন ফের বাংলাকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে শাণ দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, “বাংলায় পানীয় জলের প্রকল্পের টাকাও বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। যাঁরা রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাকে ছোট করছেন, অতীতের জবাবের মতো এই বারেও তাঁরা ভোটে শিক্ষা পাবেন।”

    ভাষা ও ভাগাভাগির প্রশ্নে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস, দু’পক্ষকেই কাঠগড়ায় তুলেছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের বৈচিত্র অনুযায়ী এক এক জায়গায় এক এক রকমের উচ্চারণ, কিন্তু তা বলে তাকে বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া অন্যায়।’’ এরই পাশাপাশি তাঁর তোপ, ‘‘মমতা যখন আডবাণীর মানস-কন্যা ছিলেন, তখন বলেছিলেন আমাদের রাজ্যের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশিদের নাম আছে। তিনি ২০০৫ সালে বলেছিলেন, ওই তালিকায় ভোট করতে দেবেন না। আরএসএসের ‘এজেন্ডা’ এই রাজ্যে নিয়ে এসেছেন তৃণমূল নেত্রী। এখন মানুষের মধ্যে ভাগের রাজনীতি হচ্ছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)