‘এসআইআর’-এর সঙ্গে জুড়ল ‘ভোট চুরি’-ও, সংসদ চত্বরে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ তৃণমূল সাংসদদের
আনন্দবাজার | ০৮ আগস্ট ২০২৫
নির্বাচন কমিশনের ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ বা এসআইআর-এর বিরুদ্ধে গত কয়েক দিন ধরেই সংসদের ভিতরে এবং বাইরে সরব হচ্ছে বিরোধী দলগুলি। বিরোধীদের বিক্ষোভের জেরে বার বার মুলতুবি হয়েছে সংসদের অধিবেশন। এই পরিস্থিতিতে কমিশনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে এ বার ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ তুলে সরব হল তৃণমূল। শুক্রবার সকালে সংসদ চত্বরে কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদেরা। ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
‘নির্বাচন কমিশন ছিঃ ছিঃ’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায় তৃণমূল সাংসদদের। তাঁদের হাতে ছিল গেরুয়া রঙের পোস্টার, যাতে বাংলায় লেখা ‘ভোট চুরি’। অভিষেকের হাতে ধরা একটি ব্যানারে বাংলাতেই লেখা ছিল ‘চুপি চুপি ভোট চুরি’। সঙ্গে ইংরেজিতে লেখা সাইলেন্ট ইনভিসিবল রিগিং (গোপন এবং অদৃশ্য কারচুপি), যেগুলির ইংরেজি আদ্যক্ষর যোগ করলেও এসআইআর হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনের ‘কারচুপি’র উদাহরণ দিয়েছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মহাদেবপুরা বিধানসভায় ভয়ঙ্কর ভোট চুরি হয়েছে। সেখানে এক লক্ষেরও বেশি ভোট চুরি হয়েছে।’’ তিনি জানান, বেঙ্গালুরুর ওই লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস পেয়েছিল ৬ লক্ষ ২৬ হাজার ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ৬ লক্ষ ৫৮ হাজার ভোট। হারজিতের ব্যবধান ছিল ৩২ হাজারের সামান্য বেশি। আর শুধু মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনে দুই দলের তফাত ছিল ১ লক্ষ ১৪ হাজারের বেশি ভোট। নানা উপায়ে ভুয়ো ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত করা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকেও ওই কমিশনের বিরুদ্ধে ওই ‘তথ্যপ্রমাণ’ তুলে ধরেন রাহুল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অভিষেকও। তৃণমূল অবশ্য শুক্রবার কমিশনের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল।
প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে এসআইআর-এর ভিত্তিতে তৈরি তালিকার খসড়া শুক্রবারই প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। তাতে ৬৫ লক্ষেরও বেশি নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। বিজেপির দাবি, তালিকা থেকে নিষ্কাশিতেরা ‘ভুয়ো ভোটার’ বা ‘অনুপ্রবেশকারী’। এ ছাড়া মৃত, স্থানান্তরিত, একাধিক স্থানে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিতদের নামও বাদ পড়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে, সারা দেশেই এই এসআইআর হবে। পশ্চিমবঙ্গে তার তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের অবশ্য বক্তব্য, ভোটার তালিকার এই সংশোধনের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন। এতে নির্বাচনপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। পাশাপাশি বাদল অধিবেশনে বিরোধী দলগুলিকে একজোট হয়ে এসআইআর-এর বিরোধিতা করতেও দেখা যাচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, এসআইআর-এর পাশাপাশি ভোট চুরির অভিযোগকে সামনে রেখেও কমিশন এবং বিজেপিকে নিশানা করতে চলেছে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী শিবির।