• ‘CBI এক জায়গাতেই আটকে রয়েছে…’, দাবি নির্যাতিতার বাবা-মায়ের, আরজি কর মামলার তদন্ত কোন পথে?
    এই সময় | ০৮ আগস্ট ২০২৫
  • আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো। সে দিন গভীর রাতে কলেজের ডাক্তারির ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ওঠে। পরের দিন সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। এর পরের ঘটনাক্রম কার্যত ইতিহাস তৈরি করেছে। সেই ইতিহাস প্রতিবাদের, বিক্ষোভের, গণ আন্দোলনের। ওই ঘটনায় ১৬২ দিনের মাথায় কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে শিয়ালদহ আদালত। ১৬৪ দিনের মাথায় সাজা শোনানো হয় আমৃত্যু কারাবাসের। তবে এই মামলা কিন্তু এখনও শেষ হয়নি।

    প্রথম থেকেই নির্যাতিতার বাবা-মা দাবি করে এসেছেন, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সঞ্জয় রায় একমাত্র কালপ্রিট নয়। আরও অনেকে যুক্ত। এ নিয়ে আদালতেও সরব হন তাঁদের আইনজীবী। এরই মধ্যে নিম্ন আদালতে সিবিআই তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তদন্তে বেশ কিছু তথ্য, সাক্ষ্য নতুন করে সামনে এসেছে। অন্য দিকে, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনাস্থল ঘুরে দেখতে চেয়ে নিম্ন আদালতে আবেদন জানিয়েছিল নির্যাতিতার পরিবার। যদিও তা খারিজ হয়ে যায়। বিচারক জানান, এই মুহূর্তে অকুস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করতে দেওয়ার এক্তিয়ার নিম্ন আদালতের নেই।

    সিবিআইয়ের তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেন নির্যাতিতার বাবা-মা। মামলার আবেদনে জানানো হয়, সিবিআইয়ের তদন্তের উপর তাঁদের ভরসা নেই। SIT গড়ে নতুন করে তদন্ত হোক। সেই মামলা বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের আদালতে বিচারাধীন।

    শিয়ালদহ অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস সাজা ঘোষণা করে বলেছিলেন, এই ঘটনা বিরল থেকে বিরলতম নয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করে সিবিআই। আরজি করের ঘটনাকে বিরলতম দাবি করে দোষী সঞ্জয় রায়ের সর্বোচ্চ সাজার আর্জি জানানো হয় হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে। একই সঙ্গে সঞ্জয় রায়ও একটি আবেদন করে। তার দাবি, তাকে ফাঁসানো হয়েছে, তাকে বেকসুর মুক্তি দেওয়া হোক। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চেই সঞ্জয়ের মামলা গৃহীত হয়। মূল মামলার সঙ্গে তা শোনা হবে। আগামী মাসে তার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

    এই মামলায় বার বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে সিবিআইয়ের ভূমিকা। নির্যাতিতার পরিবার অনেকবার সুর চড়িয়েছে কেন্দ্রীয় এই তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে। এমনকী, গত জুলাই মাসে তদন্তকারী অফিসার সীমা পাহুজা ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও সদর্থক ফল হয়নি বলেই জানিয়েছিলেন ডাক্তারি পড়ুয়ার বাবা। বলেছিলেন, ‘সিবিআই এক জায়গাতেই আটকে রয়েছে। সঞ্জয় রায়কে একমাত্র দোষী বলছে। আমরা তা মানব না। এর পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে।’

    ২০২৪ সালের ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় তরুণী চিকিৎসকের দেহ। পরের দিনই কলকাতা পুলিশে কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে হেফাজতে নেয় পুলিশ। এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়ে আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা। ১৩ অগস্ট মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। তৈরি হয় ২৫ সদস্যের তদন্তকারী টিম।

    ঠিক তার পরের দিন ১৪ অগস্ট রাত দখলের ডাক দেয় নাগরিক সমাজ। মধ্যরাতে কলকাতার দখল নেয় মেয়েরা। স্কুলের পড়ুয়া থেকে সরকারি কিংবা বেসরকারি অফিসের কর্মী, গৃহবধূ, হাজার হাজার মহিলা রাস্তায় নামেন। সে ভিড়ে বহু পুরুষও ছিলেন। বারুদ বুকে নিয়ে শহর কলকাতা সেই রাত জেগেছিল। শুধু কলকাতাই নয়, প্রতিবাদের গনগনে আঁচে তেতে উঠেছিল বীরভূম থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি থেকে নদিয়া। এর পরে ডাক্তারদের অনশন, অবস্থান, প্রতিবাদ, মানববন্ধন, মিছিলে ছয়লাপ শহর, সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষণা— ঘটনাক্রম আবর্তিত হতে থাকে।

    আরজি করের ঘটনাকে সামনে রেখে মুখর হওয়ার যে সাহস বাংলা দেখিয়েছে, তা গোটা দেশে নজিরবিহীন। সুদূর অতীতে এমন প্রতিবাদ বড় একটা দেখা যায়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রতিবাদের ঝাঁজ কমেছে ঠিকই, ধীরে ধীরে নাগরিক জীবনও ফিরেছে আপন ছন্দে। তবে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গিয়েছে, ‘সব উত্তর কি মিলল?’

  • Link to this news (এই সময়)