• বছর ঘুরল, বদল কই? উত্তর খুঁজছে রোগীর পরিজন
    এই সময় | ০৮ আগস্ট ২০২৫
  • সুপ্রকাশ মণ্ডল

    কোনও রকমে স্ট্রেচার টেনে এসএসকেএমের ইমার্জেন্সিতে ঢুকলেন এক তরুণী। স্ট্রেচারে অচেতন মা। চিকিৎসককে ডেকে লাভ হলো না। জানিয়ে দেওয়া হলো- প্রথমে টিকিট করতে হবে। বৃষ্টি মাথায় পাশের বিল্ডিংয়ে গিয়ে টিকিট করে এলেন তরুণী। তখন রাত প্রায় সাড়ে বারোটা, জুলাইয়ের ১৮ তারিখ।

    এর পরে চিকিৎসক জানালেন, রোগীকে নিয়ে যেতে হবে ট্রমাকেয়ার বিল্ডিংয়ে। নির্দেশ দেওয়া হলো টিকিটেও। মাঝরাতে অনেকটা পথ স্ট্রেচার ঠেলে পার করলেন মেয়েটি একাই। শুধু তিনি নন, ইমার্জেন্সিতে চোখ রাখলেই দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই রোগীর স্ট্রেচার তাঁদের পরিজনই ঠেলছেন। হাসপাতাল কর্মীরা কোথায়?

    এই ঘটনাটি নিছক বিচ্ছিন্ন নয়, প্রশ্ন তোলে রাজ্যের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস সরকারি হাসপাতালের রোগী পরিষেবার মান নিয়ে। গত বছর আরজি কর আন্দোলনের সময়ে জুনিয়র ডাক্তাররা বারংবারই এই পরিষেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কারণ, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রোগী-পরিজনের সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টি। তাই নিরাপত্তার খাতিরেও পরিষেবার মান শোধরানোর দাবি উঠেছিল। কিন্তু বছর ঘুরতে দেখা গেল, পরিস্থিতি সেই তিমিরেই।

    অথচ, গত ৯ অগস্ট আরজি করের ওই মর্মান্তিক ঘটনার পরে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, নিরাপত্তাব্যবস্থায় আমূল বদল আনা হবে হাসপাতালে। কিন্তু এক বছর পর কলকাতার বড় পাঁচটি সরকারি হাসপাতাল রাতের অন্ধকারে ঘুরে বোঝা গেল, রোগীর চাপের নিরিখে সবচেয়ে ব্যস্ত এসএসকেএমে-ও নিরাপত্তা নামমাত্র। প্রতি ঘণ্টায় পুলিশ ব্যাটারি-চালিত গাড়ি বা সাইকেলে করে হাসপাতাল চত্বরে টহল দেয়। বিল্ডিংয়ের প্রবেশপথে রয়েছে নিরাপত্তারক্ষীও। কিন্তু বিশাল হাসপাতাল চত্বরে খোলা আকাশের নীচে শত শত রোগীর পরিজনের রাত্রিযাপন যেন নিরাপত্তার নজর এড়িয়ে যায়।

    মহিলা চিকিৎসকদের রাতে ডিউটি কমিয়ে আনার কথা থাকলেও, বাস্তবে সে দিন এসএসকেএমের ইমার্জেন্সিতে দুই পুরুষ চিকিৎসকের সঙ্গে ডিউটি করছিলেন এক মহিলা চিকিৎসক, দু'জন নার্স। প্রশ্ন করা হলে ওই চিকিৎসক অকপট, 'কোনও দিনের জন্যও নাইট করা বন্ধ হয়নি। তবে আমার কোনও সমস্যা নেই।' নার্সরাও তা-ই বলছেন। অন্যদিকে, চিকিৎসকেরা স্পষ্ট করে বলছেন, কোনও রোগীকে যখন এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে রেফার করা হয়, তখন তাঁকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব হাসপাতালেরই। তা সত্ত্বেও কেন পরিজন স্ট্রেচার টানছেন, তার সদুত্তর মেলেনি।

    সব মিলিয়ে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে-এক বছর পরেও আরজি কর-কান্ডের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া গেল কতটা?

  • Link to this news (এই সময়)