আবেদনই জানাননি নবান্ন অভিযানকারীরা, জমায়েতের বিকল্প জায়গা বেঁধে দিল পুলিশ
প্রতিদিন | ০৮ আগস্ট ২০২৫
অর্ণব আইচ: আর জি কর কাণ্ডের এক বছর পার। শনিবার নবান্ন অভিযানের ডাক। তিলোত্তমার বাবা-মা ‘অরাজনৈতিক’ এই মিছিলে সকলকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শর্তসাপেক্ষে মিছিলে অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। তবে এখনও পুলিশের কাছে আবেদন জানাননি মিছিলকারীদের কেউ। শুক্রবার ভবানীভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে এমনই দাবি করলেন রাজ্যের পুলিশকর্তারা।
এদিন এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম, এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার এবং পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা সাংবাদিক বৈঠক করেন। শান্তিপূর্ণ মিছিলের ক্ষেত্রে পুলিশের কোনও আপত্তি নেই বলেই জানান এডিজি আইনশৃঙ্খলা জাভেদ শামিম। এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকারের বক্তব্যও প্রায় একই। তিনি জানান, নবান্নের আশেপাশে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি রয়েছে। তাই যেকোনও জমায়েত নিষিদ্ধ। মন্দিরতলা বাসস্ট্যান্ড, বঙ্কিম সেতুর নিচে এবং হাওড়া ময়দানে জমায়েত করা যাবে। ৩টি জায়গা মিলিয়ে ১২০০ জন থাকতে পারেন মিছিলে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশমতো বিকল্প জায়গা হিসাবে সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ডকে বেছে দেওয়া হয়েছে। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। সেক্ষেত্রে প্রশাসনও মিছিলকারীদের পূর্ণ সহযোগিতা করবে। তবে কোনও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা যাবে না। সেক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশ বাধ্য হবে বলেই জানান পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা।
উল্লেখ্য, আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার ফের শহরজুড়ে রাত দখল কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে জমায়েত কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। সেখানে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। শনিবার আবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন। তৃণমূল ছাড়া সমস্ত রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের এই মিছিলে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তাঁদের অনুরোধ, মিছিলে দলীয় পতাকা ব্যবহার করা যাবে না। নবান্ন অভিযানে জনজীবন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে। মামলা করেন হাওড়ার এক বাসিন্দা। আগেই এনিয়ে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন ব্যবসায়ীরা। সেই মামলা অবশ্য বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে বিচারাধীন।
মামলাকারীদের বক্তব্য, নবান্ন অভিযান হলে, যাঁরা রাস্তা বেরয় তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়। স্কুলফেরত পড়ুয়াদের অসুবিধা হয়, অফিসযাত্রীদেরও প্রচণ্ড ভোগান্তিতে পড়তে হয়। হাই কোর্টের বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও ধরনা কর্মসূচি সাংবিধানিক অধিকার। তাঁরা অভিযান করতে পারেন। যেহেতু পুলিশ আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তাই অভিযান আটকাতে পদক্ষেপ করতে পারবে। পাশাপাশি, কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি আদালতের পরামর্শ, কোনও সরকারি সম্পত্তি বা পুলিশ আধিকারিকদের ক্ষতিসাধন না করে কর্মসূচি করাই শ্রেয়।
এদিকে, শনিবার ‘অভয়া মঞ্চ’ এবং চিকিৎসকদের যৌথমঞ্চের ডাকে কালীঘাট এলাকায় মিছিলের হস্তক্ষেপ করল না কলকাতা হাই কোর্ট। কেউ আইন অমান্য করলে পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে বলে নির্দেশ বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের। আদালত জানিয়েছে, যেহেতু পুলিশ ইতিমধ্যেই কোনও অনুমতি দেয়নি তাই এই মুহূর্তে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রোড এবং হাজরা রোড ব্যবসায়ী সমিতির তরফে কালীঘাট চলো অভিযানের বিরোধিতায় দায়ের হয় মামলা। সেই মামলায় এই নির্দেশ।