• বাংলার পাশে তামিল, তৃণমূলের পাশে কংগ্রেস, ‘বাংলা ভাষার প্রতি অসম্মান’ নিয়ে লোকসভায় মুলতুবি প্রস্তাব কংগ্রেস সাংসদের
    আনন্দবাজার | ০৮ আগস্ট ২০২৫
  • বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের প্রতি সংহতি জানিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিন। এ বার বাংলাভাষার প্রতি অসম্মানের বিষয় তুলে লোকসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনতে চেয়ে নোটিস দিলেন তামিলনাড়ুরই কংগ্রেস সাংসদ মনিকম টেগোর। তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা হিসাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা হওয়ার পরে কংগ্রেস সাংসদের এ হেন ভূমিকাকে সর্বভারতীয় স্তরে দুই দলের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন অনেকে।

    বৃহস্পতিবার লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর বাড়িতে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা নৈশভোজে মিলিত হবেন। সেখানেও যোগ দেবেন অভিষেক। সকালে তিনি কলকাতা থেকে দিল্লি চলে গিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, সে দিনই তামিলভূমের কংগ্রেস সাংসদ বাংলা ভাষার পাশে দাঁড়িয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনতে চেয়ে নোটিস দিয়েছেন লোকসভায়। তামিলনাড়ু-সহ গোটা দক্ষিণ ভারতেই ভাষা নিয়ে আবেগ রয়েছে। জাতির সঙ্গে ভাষার অস্মিতা সেখানে প্রবল। মুলতুবি প্রস্তাবের নোটিসে সেই ভাষার সম্মানের প্রশ্নই তুলেছেন তামিলনাড়ুর বিরদুনগরের কংগ্রেস সাংসদ। উল্লেখ্য, লোকসভার চলতি বাদল অধিবেশনে সংসদের ভিতরে-বাইরে কক্ষ সমন্বয় এবং বিক্ষোভে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের ঐক্যের ছবি দেখা যাচ্ছে। যা আগের বাজেট অধিবেশনে দেখা যায়নি। অভিষেক লোকসভার দলনেতা হওয়ার পরে তা আরও বাড়বে বলেই অভিমত তৃণমূলের অনেকের।

    দিল্লিতে কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয় বাংলার প্রেক্ষিতেও ‘অর্থবহ’ কি না, সেই কৌতূহলও রয়েছে। যদিও এখনই রাজ্যের ক্ষেত্রে এই সমন্বয়কে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলতে রাজি নন অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, দিল্লিতে বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে বিরোধী দলগুলির ঐক্যের সঙ্গে রাজ্য রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। দিল্লিতে কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, সিপিএম, সিপিআই— সকলে একজোট। আবার কেরলের রাজনীতিতে বামেদের সঙ্গে মূল লড়াই কংগ্রেসের। সংসদের মকর দ্বারের সামনে বিরোধীদের ধর্নায় তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্র, কংগ্রেসের প্রিয়ঙ্কা গান্ধীদের সঙ্গে পাশে থাকতে দেখা যাচ্ছে রাজস্থানের সিকর লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম সাংসদ অমরা রামকে। তবে তার মানে এই নয় যে, কলকাতায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচিতে পাশে দেখা যাবে শুভঙ্কর সরকার, মহম্মদ সেলিমদের। এ সব জল্পনা বাদ দিলেও সংসদে সমন্বয়ের প্রশ্নে কংগ্রেস সাংসদ টেগোরের মুলতুবি প্রস্তাব ‘গুরুত্বপূর্ণ’।

    গত দু’মাস ধরে বাংলাভাষীদের উপর ‘আক্রমণ’ নিয়ে সরব তৃণমূল। ধারাবাহিক ভাবে তাকে জাতীয় স্তরেও আলোচ্য করতে পেরেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল। সম্প্রতি দিল্লি পুলিশের একটি নথি সেই বিতর্কের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে। যেখানে বাংলাভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশ। তার পরে বিজেপি নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়ের মন্তব্য সেই বিতর্ক আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। ‘এক্স’ পোস্টে দিল্লি পুলিশের পক্ষে সাফাই দিতে গিয়ে অমিত লিখে বসেন, ‘বাংলা বলে কোনও ভাষা নেই।’ তা নিয়েও আক্রমণের মুখে পড়েছে বিজেপি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)