ভিন্ রাজ্যে এ রাজ্যের শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে সরগরম রাজনীতি। তবে পশ্চিমবঙ্গে কাজে আসা ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা ঠিক উল্টো। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগের মতোই নির্ঝঞ্ঝাটে কাজ করেছেন। আর এই সূত্রেই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের পুরুলিয়ার জেলা সভাপতি উজ্জ্বল কুমারের দাবি, ‘‘বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির থেকে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি যে সম্পূর্ণ পৃথক, এটাই তার উদাহরণ।’’
বাঁকুড়ার বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলে প্রায় একশো কারখানা রয়েছে। শিল্প সংগঠনগুলির দাবি, এখানকার শ্রমিকদের ৬০ শতাংশই ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। এর অন্যতম কারণ, এই শিল্পাঞ্চল মূলত ইস্পাত কারখানা নির্ভর। ইস্পাত কারখানায় তীব্র তাপে কাজ করার মতো কঠিন মানসিকতা স্থানীয় শ্রমিকদের মধ্যে বিশেষ থাকে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘুটগড়িয়ার একটি কারখানার বিহারের দুই শ্রমিক বলেন, “শুনছি বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের অন্য রাজ্যে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এটা একেবারেই অনুচিত। নিজের এলাকায় কাজ না পেয়েই আমরা এখানে এসেছি। এখানে কিন্তু কোনও সমস্যায় আমাদের পড়তে হচ্ছে না।” একই বক্তব্য পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শিল্পাঞ্চলে কাজ করা বিহার, উত্তরপ্রদেশের শ্রমিকদের একাংশের। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা রয়েছেন। কোনওদিন সমস্যায় পড়তে হয়নি। সংসার চালানোর তাগিদেই পরিজনদের ছেড়ে শ্রমিকেরা অন্য রাজ্যে যান। সেটা সবাইকে বুঝতে হবে।
তবে প্রশ্ন উঠছে, কেন হাজার হাজার শ্রমিককে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া থেকে ভিন্ রাজ্যে কাজে যেতে হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, মুখেই শিল্পায়নের কথা বলে তৃণমূল। বাস্তবে ভারী শিল্প গড়তে ব্যর্থ হয়েছে তারা। তাই ভিন্ রাজ্যেই ভরসা পশ্চিমবঙ্গের বেকার ছেলেমেয়েদের। পশ্চিমাঞ্চল চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরকার বলেন, “বাংলা থেকে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে যাঁরা ভিন্ রাজ্যে গিয়েছেন, তাঁদের এখানে ফিরিয়ে আনতে গেলে এ রাজ্যে বহুমুখী শিল্প গড়ে তুলতে হবে। এখানকার শিল্প বিশেষ একটা শ্রমিক নির্ভর নয়। বাঙালি শ্রমিকেরা যে ধরনের কাজে অভ্যস্ত, তেমন কাজও এখানে কম।’’ যদিও এই দাবি মানতে নারাজ বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা। তিনি বলেন, “বাম আমলে কারখানাগুলিতে লাগাতার হরতাল, ধর্মঘটে জড়িয়ে পড়তেন স্থানীয় শ্রমিকেরা। সেখান থেকেই স্থানীয় শ্রমিকদের কাজের মানসিকতা নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে ভিন্ রাজ্য থেকে আসা উদ্যোগপতিদের। তাই কারখানায় অহেতুক ঝামেলার আশঙ্কায় গুটিকয় স্থানীয় শ্রমিক নিয়ে বরং বেশিরভাগ ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের নিয়ে কারখানা চালাচ্ছেন। তবে স্থানীয় উদ্যোগপতিরা এলাকার শ্রমিকদেরই বেশি কাজের সুযোগ দিচ্ছেন।” এই সমস্যা সমাধানে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন মধুসূদন।
তবে শ্রম দফতরের দাবি, স্থানীয় ও জমিহারা পরিবার থেকেই শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে শিল্প সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সে মতো তারা স্থানীয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। এ ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় কোনও কারখানা স্থানীয়দের বঞ্চিত করে বহিরাগত শ্রমিক বেশি সংখ্যায় নিয়োগ করছে, তাহলে প্রশাসনের কাছে স্থানীয় শ্রমিকেরা অভিযোগ জানালে পদক্ষেপ করা হবে।