বাঁকুড়ায় দ্বারকেশ্বর নদের ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে বিঘার পর বিঘা উর্বর তিন ফসলি জমি
আনন্দবাজার | ০৮ আগস্ট ২০২৫
আগে গ্রাম থেকে বহু দূর দিয়ে বয়ে যেত দ্বারকেশ্বর নদের জল। সারা বছরের মতো ভরা বর্ষার রাতেও নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যেতেন দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে থাকা বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের শ্রীরামপুর কলোনির বাসিন্দারা। কিন্তু এখন বর্ষার রাতে দু@চোখের পাতা এক করতে পারেন না গ্রামের মানুষ। ভয়াবহ ভাঙনে প্রতিদিন একটু একটু করে গ্রামের দিকে এগিয়ে আসছে দ্বারকেশ্বর। প্রায় তিনশো বিঘে জমি আগেই গিলে খেয়েছে সে। এ বার আশঙ্কা ভিটেমাটি হারানোর।
বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের নিকুঞ্জপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শ্রীরামপুর কলোনিতে সব মিলিয়ে বসবাস প্রায় তিনশো পরিবারের। কলোনির একদিকে বয়ে গিয়েছে দ্বারকেশ্বর, অন্য দিকে কানা নদী। বছরের অন্যান্য সময় দুই নদীতেই সে ভাবে জল থাকে না। তবে বর্ষায় কার্যত ফুলে ফেঁপে ওঠে দু’টি নদীই। সম্প্রতি দ্বারকেশ্বর নদের চর থেকে অপরিকল্পিত ভাবে ব্যাপক বালি তোলার ফলে নদীর স্বাভাবিক জলস্রোত বইছে শ্রীরামপুর কলোনির পাড় ঘেঁসে। আর সেই স্রোতেই প্রতি মূহুর্তে ভেঙে পড়ছে নদীর পাড়। স্থানীয়দের দাবি, ভাঙনের কবলে পড়ে গত পাঁচ বছরের মধ্যেই নদী কমপক্ষে ৫০-৭০ মিটার গ্রামের দিকে এগিয়ে এসেছে। পাড় ক্রমশ ভাঙতে থাকায় প্রতিদিন নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে পাড়ে থাকা উর্বর তিন ফসলি কৃষিজমি। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, যে ভাবে নদী এগিয়ে আসছে, তাতে কৃষিজমির পাশাপাশি একদিন গিলে খাবে আস্ত শ্রীরামপুর কলোনিকেই। আপাতত তাই দ্বারকেশ্বর নদের পাড় বাঁধানোর দাবিতে সরব হয়েছেন শ্রীরামপুর কলোনির অসহায় পরিবারগুলি।
শ্রীরামপুর কলোনির বাসিন্দা কল্পনা হালদার বলেন, ‘‘চলতি বছর বর্ষা শুরুর সময় থেকে দ্বারকেশ্বর নদে প্রায় চারবার বান এসেছে। নদীতে বান এলে আমাদের গ্রামের সকলের চোখে ঘুম উড়ে যায়। পালা করে গ্রামবাসীরা নদীর পাড়ে এসে দেখে নদী কতটা এগিয়ে এল। এ ভাবে আর কত দিন! নদীর পাড় বাঁধানো না হলে হয়তো এ বছরই আমাদের ভিটে মাটি সব হারিয়ে যাবে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা কানাই ঘোষ বলেন, ‘‘এক সময় দ্বারকেশ্বর নদের জলস্রোত বইতো গ্রামের উল্টো দিকের পাড় ঘেঁসে। গত বছর কয়েক ধরে শ্রীরামপুর কলোনি লাগোয়া চর থেকে বালি তুলে নেওয়ার ফলে এখন গ্রামের পাড় ঘেঁসে বইছে দ্বারকেশ্বরের জলস্রোত। এর ফলে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে গ্রাম লাগোয়া নদীর পাড়ে। সব জেনেশুনেও নির্বিকার প্রশাসন।’’
বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজিত অগস্তি বলেন, ‘‘মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে রাজ্যের শাসক দল ও প্রশাসনের কোনও মাথাব্যথা নেই। সকলে মিলে ভাগ বাটোয়ারা করে বালি লুঠ করে তৃণমূল নেতারা মানুষের জীবন-জীবিকাকে ঠেলে দিচ্ছে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার দিকে।’’
তৃণমূল নেতা তথা ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অভিরূপ খাঁ বলেন, ‘‘অতিরিক্ত বৃষ্টির জেরে দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে ওই এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন হচ্ছে। খবর পাওয়ার পরই আমরা তড়িঘড়ি পাড় বাঁধানোর জন্য বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে অপরিকল্পিত ভাবে বালি তোলা হয়ে থাকলে প্রশাসন কঠোরতম পদক্ষেপ করবে।’’