• জল ভেঙে সাপের পাশে হাঁটছে মানুষ, চরম দুর্ভোগ লোকনাথ সরণিতে
    আনন্দবাজার | ০৮ আগস্ট ২০২৫
  • দ্বীপের মতো জেগে রয়েছে বারাসতের লোকনাথ সরণি।

    চার দিকে জল। যাঁদের বসবাস দোতলায়, তাঁরা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। যাঁরা একতলায় থাকেন, তাঁদের অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। কারণ, গত ১৫ দিন ধরে লোকনাথ সরণির বহু বাড়ির একতলায় জল ঢুকে রয়েছে। তার উপরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলেছে সাপের উপদ্রব। এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে কবে মুক্তি পাবেন বাসিন্দারা, তা নিয়ে আশ্বাসবাণী শোনাতে পারছে না খোদ পুরসভাও।

    গত বুধবার লোকনাথ সরণির একটি বাড়ি থেকে এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়। সেই বাড়ির একতলায় জমা জলের মধ্যে মৃত অবস্থায় পড়েছিলেন ওই ব্যক্তি। রাস্তায় প্রায়কোমর সমান জল থাকায় তাঁর দেহ উদ্ধার করতে বাড়ি পর্যন্ত যেতে পারেনি পুলিশের গাড়ি। শেষে ওই ব্যক্তির দেহ চাদরে মুড়িয়ে জলের মধ্যে দিয়ে প্রায় পাঁচশো মিটারনিয়ে গিয়ে সাইকেল ভ্যানে তোলেন ডোমেরা। সেই দৃশ্য সামনেআসতে অস্বস্তি বাড়ে বারাসত পুরসভারও।

    লোকনাথ সরণিতে বৃহস্পতিবার পৌঁছে দেখা গেল, প্রায় দ্বীপের মতো পরিস্থিতি। চার দিকে জল। বৃহস্পতিবার রাত থেকেদুর্যোগের পূর্বাভাস থাকায় নতুন করে আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন এলাকাবাসী। কর্তব্যরত পুরকর্মীরাও দ্রুত জল নামার ব্যাপারে কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি। স্থানীয় বাসিন্দা ফুলেশ্বরী দাসের কথায়, ‘‘কোনও বার এত জল জমে না। কবে জল নামবে, কে জানে। সব চেয়ে ভয় সাপের উপদ্রব নিয়ে। জল ভেঙে হাঁটার সময়ে দেখছি, পাশ দিয়ে সাপ যাচ্ছে।’’

    স্থানীয়েরা জানান, এলাকায় চন্দ্রবোড়া সাপের উপদ্রব এমনিতেই ছিল। তার উপরে লাগাতার বৃষ্টিতে পুকুর, ফাঁকা জমি—সব ভেসে গিয়েছে। সাপ ঘরে ঢুকে আসছে। দিনকয়েকের মধ্যে দু’টি সাপ ধরা পড়েছে। এমনকি, সাপের কামড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবরও ছড়িয়েছে এলাকায়।

    বারাসত পুরসভার অধীন লোকনাথ সরণির পার্শ্ববর্তী গ্রিন পার্ক কিংবা সৈনিক কলোনির মতো পঞ্চায়েত এলাকাওজলে ডুবে রয়েছে। ওই দুই জায়গার জলও এসে জমছে লোকনাথ সরণিতে। বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় ব্যারাকপুর রোডের নীচ দিয়ে নিকাশির পথ রয়েছে। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, রাস্তার দু’দিক জবরদখল করে গড়ে উঠেছে ক্যাফে, রেস্তরাঁ, বেসরকারি কলেজ। সেগুলির নীচে ঢাকা পড়ে গিয়েছে বড় নিকাশি নালা। বিশেষত, ব্যারাকপুর রোডের অদূরে একটি বেসরকারি কলেজকে এ জন্য দায়ী করছেন বাসিন্দারা।

    এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে দ্রুত লোকনাথ সরণির বাসিন্দাদের নিষ্কৃতি দেওয়ার ব্যাপারে কোনও আশার কথা শোনাতে পারছে না বারাসত পুরসভাও। স্থানীয় চার নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি শিল্পী দাসেরকথায়, ‘‘৬৫ বিঘা পুকুর ভেসে গিয়েছে লোকনাথ সরণি লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকায়। আজ আমরা নিকাশি নালার উপরে জবরদখল খানিকটা ভেঙেছি জল বার করার জন্য। তার জন্য ওই এলাকায় সকালে উত্তেজনাও ছড়ায়। পাম্প চালানো হয়েছে। জায়গাটি কড়াইয়ের মতো। জল ধীরে ধীরে নামছে।’’

    এ দিন ব্যারাকপুর রোড ঘুরে দেখা গেল, রাস্তার দু’পাশে কোথাও গড়ে উঠেছে রেস্তরাঁ, কোথাও হোটেল, কোথাও বা কারখানা। রাস্তা থেকে সেই সব জায়গায় যাওয়ার জন্য বড় নর্দমার উপর দিয়ে তৈরি করে ফেলা হয়েছে কালভার্ট। নির্মাণকারীদের দাবি, তাঁরা অনেক বছর ধরে ওই জায়গায় রয়েছেন।

    বারাসত পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা শ্রমিকদের দিয়ে নিকাশি নালা পরিষ্কার করাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু, জেট মেশিন কিংবা জেসিবি দিয়ে কালভার্টের নীচে পরিষ্কার করানোর মতো পরিকাঠামো তাঁদের নেই।

    পুর চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা কেএমডিএ-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। ওরা পাঁচটি নালা সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জবরদখলকারীদের মৌখিক ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। তবে, এর চেয়ে বেশি ব্যবস্থা নিতে পারবে পূর্ত দফতর। কারণ, ব্যারাকপুর রোড রাজ্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অধীনে। আমরা পূর্ত দফতরকে চিঠি দিচ্ছি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)