• সীমান্তবর্তী তপনে মসজিদে ঢুকে নামাজ বন্ধ বিএসএফের, বিতর্ক, বাংলাদেশি খোঁজার নামে হুমকি, বিক্ষোভ এলাকাজুড়ে
    বর্তমান | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, তপন: বিএসএফের বিরুদ্ধে ‘ধর্মাচরণে’ বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী তপন ব্লকের গুড়াইল গ্রাম পঞ্চায়েতের বাখরপুরে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিএসএফের এহেন ‘অতি সক্রিয়তায়’ ক্ষিপ্ত স্থানীয় গ্রামবাসীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, মাগরিবের নামাজ চলাকালীন বাখরপুর জামে মসজিদ থেকে বাইরে নিয়ে গিয়ে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বিএসএফের জওয়ানরা। বাংলাদেশি খোঁজার নামে কেন নামাজ মাঝপথে থামানো হল, তা নিয়েই ক্ষোভ বাড়ছে বাসিন্দাদের। বারবার যোগাযোগ করা হলেও, এই বিষয়ে বিএসএফের নর্থবেঙ্গল ফন্ট্রিয়ারের কোনও আধিকারিক কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। 

    বাখরপুরের স্থানীয়দের দাবি, সন্ধ্যায় নামাজ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় ২০০-২৫০ মিটার দূরের ছত্রহাটি সীমান্ত চৌকির কয়েকজন বিএসএফ জওয়ান মসজিদে নামাজ পড়ছেন, এমন অবস্থায় কয়েকজনকে ধমক দিয়ে বাইরে নিয়ে আসেন। জওয়ানদের দাবি, দুপুরে মসজিদে নাকি কোনও এক বাংলাদেশি নামাজ পড়তে এসেছিল। তাকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালাতে সাহায্য করেছেন বাসিন্দারা। গ্রামবাসী রাজিউর চৌধুরির কথায়, মসজিদের পিছনেও সবসময় বিএসএফ মোতায়েন থাকে। কোনও বাংলাদেশি সেখানে ঢুকেছিল, এমন কিছু জানা নেই। দেশের সীমান্ত সুরক্ষার স্বার্থে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য আমরা গ্রামবাসীরাই জমি দিতে প্রস্তুত। সবসময় সহযোগিতা করি তাদের। অথচ যেভাবে ধর্মাচরণে তারা বাধা দিয়েছে, তা অনভিপ্রেত। বিষয়টি নিয়ে আজ, শনিবার গ্রামবাসীরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ লাগোয়া বাখরপুর গ্রামের বেশ কিছু অংশে এখনও সীমান্ত অরক্ষিত। নানা জটিলতার কারণে সেখানে এখনও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া যায়নি।  

    বৃহস্পতিবার ঘটনার সময় মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন ইরফান চৌধুরী। তাঁর দাবি, নামাজ শেষ না হতেই জওয়ানরা ধমকে আমাদের মসজিদ থেকে বাইরে বের করে নিয়ে যায় এবং হুমকির সুরে কথা বলে। অভিযোগ করে, আমাদের মসজিদে নাকি কোনও বাংলাদেশি এসে নামাজ পড়েছে। তাকে বাংলাদেশে চলে যেতে সাহায্য করা হয়েছে, আমাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হয়। ইরফানের কথায়, জওয়ানরা বলছিল, তাদের কাছে নাকি প্রমাণ আছে! আমরা তা দেখতে চাওয়া মাত্রই, নানারকমের হুমকি দেওয়া শুরু হয়। 

    বাখরপুর সংসদের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মোকসেদুল চৌধুরির অভিযোগ আরও বড় আকারের। তাঁর অভিযোগ, একজন বিএসএফ আধিকারিক আমাদের স্পষ্ট বলে গিয়েছেন, এই মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ করতে হবে। কিন্তু আমাদের মসজিদ ৩০০ বছরের পুরনো। আমরা এখানে নামাজ বন্ধ করব কেন? নামাজ বন্ধ করব না। শুক্রবার সকালে তপন থানার পুলিস গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে। তপন থানার পুলিস জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।

    গুড়াইল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বাসন্তী রায় বলেন, বিএসএফের এভাবে ধর্মীয় আবেগে আঘাত দেওয়াটা কাম্য নয়, এর তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশি খোঁজার নামে গ্রামবাসীদের হেনস্তা করা অনুচিত। গ্রামবাসীদের পাশে আছি। গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ, মাঠে কাজ করতে গেলেও বিএসএফ জওয়ানরা প্রায়ই জোর করে তাঁদের দিয়ে জঙ্গল সাফ করিয়ে নেন। এরকম বেশ কিছু ঘটনায় এবার বাসিন্দাদের অসন্তোষ বাড়তে শুরু করেছে।
  • Link to this news (বর্তমান)