সংবাদদাতা, কল্যাণী: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপের মৃত্যুর ঘটনা এখনও মানুষের স্মৃতিপট থেকে মুছে যায়নি। হস্টেলে সিনিয়রদের র্যাগিং তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। বছর তিনেক আগে আইআইটি খড়্গপুরের ছাত্র ফয়জান আহমেদের অস্বাভাবিক মৃত্যুতেও র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে। আবারও সামনে এল নামকরা এক কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। এক্ষেত্রেও সিনিয়রদের বিরুদ্ধে র্যাগিং, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক সিনিয়র গবেষকের বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের অভিযোগ এনে আত্মঘাতী হয়েছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইএসইআর) বা আইসার, কলকাতার গবেষক অনমিত্র রায় (২৫)। শুক্রবার সকালে কল্যাণী এইমসে তাঁর মৃত্যু হয়। উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে বাড়ি হলেও আইসারের কাছেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। তিন বছর ধরে গবেষণা (পিএইচডি) করছিলেন। সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে তিনি আত্মহত্যার কারণ সবিস্তারে লিখে গিয়েছেন।
পরিবারের একমাত্র ছেলে অনমিত্র অটিজমে আক্রান্ত। তবে তা তাঁর উচ্চশিক্ষার জন্য অন্তরায় হয়নি। প্রায় এক দশক ধরে আইসারে পড়াশোনা করছিলেন ডাকবিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর সন্তান অনমিত্র। সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে অনমিত্র লিখেছেন, বায়োলজি বিভাগের ল্যাবরেটরির এক সিনিয়র পিএইচডি গবেষকের হাতে তাঁকে বারবার র্যগিংয়ের শিকার হতে হয়েছে। ল্যাবের সুপারভাইজারকে জানিয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি। এমনকী, প্রতিষ্ঠানের অ্যান্টি র্যাগিং সেলে অভিযোগ জানিয়ে লাভ হয়নি কোনও। উল্টে বারবার তাঁর দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। মৃত গবেষকের পরিবারের দাবি, বিচার না পেয়ে চূড়ান্ত হতাশা থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। নিজের পোস্টে অভিযুক্ত গবেষক- ছাত্রের পিএইচডি বাতিল করারও আর্জি জানিয়ে গিয়েছেন অনমিত্র। আরও লিখেছেন, ছোট থেকে তিনি নিজের বাবা-মায়ের কাছেই শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার শিকার হয়েছেন। আইসারে এসেও একই ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে।
পুলিস সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার ল্যাবেই ছিলেন অনমিত্র। সবাই চলে যাওয়ার পর সেখানেই কোনও ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সেখানে বসেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। সেই পোস্ট দেখে সতীর্থরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ল্যাবরেটরি থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তড়িঘড়ি অনমিত্রকে কল্যাণী এইমসে ভর্তি করানো হয়। শুক্রবার সকালে তাঁর পরিবারের লোকজন পৌঁছনোর কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। অনমিত্রের খুড়তুতো দিদি পৌষালী রায় বলেন, ‘বুধবার রাতে শেষ কথা হয় ভাইয়ের সঙ্গে। ওষুধের ওভারডোজ নিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনছি। ওর অভিযোগ শুনে কর্তৃপক্ষ আগেই ব্যবস্থা নিলে এই ঘটনা ঘটত না। আমরা থানায় অভিযোগ জানাব।’ আইসার কর্তৃপক্ষ এই ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চায়নি। বিকেলে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েই দায় সেরেছে তারা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেই চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে। হরিণঘাটা থানার পুলিস ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।