• এফআইআরে অনড় কমিশন, রাজ্যকে ৭২ ঘন্টার সময়সীমা, আধিকারিকদের শাস্তি নিয়ে মুখ্যসচিবের রিপোর্ট তলব
    বর্তমান | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রথমে সাসপেন্ড, তার পর এফআইআর। ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে রাজ্যের চার আধিকারিকের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমুলক পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে চিঠি পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সেই নির্দেশ এখনও পালিত হয়নি। ফলে অবিলম্বে এই আধিকারিকদের শাস্তি সুনিশ্চিত করার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে মুখ্যসচিবকে শুক্রবার ফের চিঠি দিল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, এই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ‘প্রয়োজনীয় অ্যাকশন’ নিতে বলা হয়েছে মুখ্যসচিবকে। এখানেই শেষ নয়। কমিশনের নির্দেশ পালন করে আগামী ১১ আগস্ট দুপুর তিনটের মধ্যে রিপোর্ট দিয়ে তা জানাতে বলা হয়েছে এদিনের চিঠিতে। অর্থাৎ, ৭২ ঘন্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে মুখ্যসচিবকে।   

    কাজে গাফিলতির অভিযোগে বারুইপুর পূর্বের ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (এইআরও) তথাগত মণ্ডল, ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও বিপ্লব সরকার এবং এইআরও সুদীপ্ত দাস ছাড়াও সুরজিৎ হালদার নামে একজন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের নামেও এফআইআর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কমিশনের এই নিদানের পরেই অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়। সরকারের আধিকারিক-কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে নির্বাচন কমিশনকে বিজেপির হাতের পুতুল বলে আক্রমণ করেন।  সেই সঙ্গে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেন, ‘আমি কারও কোনও পানিশমেন্ট (শাস্তি) হতে দেব না।’

    এই অবস্থায় মুখ্যসচিবকে শুক্রবার কমিশনের চিঠি পাঠানো নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে প্রশাসনের তরফেও। এই শাস্তি যাতে না হয়, তা দেখার অনুরোধ জানিয়ে ইতিমধ্যে নবান্নের শীর্ষপর্যায় চিঠি দিয়েছে ডব্লিউবিসিএস (এগজিকিউটিভ) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ বা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কারণে আধিকারিকদের এই ভাবে শাস্তির মুখে পড়তে হলে, ব্যাক্তিগত ভাবে তাঁদের পেশাদার জীবনে প্রভাব পড়বে। আবার রাজ্যের দৈনন্দিনের সরকারি কাজও ব্যাহত হওয়ার জোর সম্ভাবনাও তৈরি হবে। সেই ক্ষেত্রে বর্তমানে রাজ্যে চালু হয়েছে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি। চলবে নভেম্বর পর্যন্ত। এই আবর্তেই আসন্ন উৎসব মরশুম। ঠিক এই সময়েই রাজ্যে এসআইআর হওয়ার চরম সম্ভাবনা। এই পর্বে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজ্যের আধিকারিকদের ‘টার্গেট’ করার আশঙ্কাও প্রকাশ  করছেন প্রশাসনের নানা স্তরের আধিকারিকরা। 

    অন্যদিকে, কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধেও কী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে? কমিশন সূত্রে খবর, নবান্নের তরফে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেদিকেই নজর রাখা হয়েছে। সোমবারের সময়সীমার মধ্যে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা বুঝেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে।  তবে ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের অনুযায়ী ভোটের যে কোনও কাজে কমিশনের ‘ডেপুটেশনে’ থাকেন কর্মী-আধিকারিকরা। ওই আইনের ৩১ এবং ৩২ নম্বর ধারা অনুযায়ী কাজে গাফিলতি প্রমাণিত হলে, সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও নেওয়া যেতে পারে। তাতে রাজ্য সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে না। 
  • Link to this news (বর্তমান)