বাংলায় ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) হবে না বলে দলের অবস্থান ঘোষণা করল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বলেছেন, ‘‘যাঁরা নির্বাচন কমিশনকে বিক্রি করে দিয়ে বলছেন, ইয়েস স্যর, তাঁদের বলছি, নো স্যর (এসআইআর)! আমরা চুপিচুপি এই কারচুপি করতে দেব না!’’
দিল্লিতে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের বৈঠকের পরে দেশ জুড়ে চর্চিত এসআইআর নিয়ে দলের অবস্থান আরও কিছুটা নির্দিষ্ট করেছেন অভিষেক। কলকাতা বিমানবন্দরে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি বাংলায় এসআইআর করতে চায়। যে কাজ দু’বছরের, তা দু-এক মাসে সম্পূর্ণ করতে চায় তারা। এটা হয় নাকি! এটা করলে সবার আগে বাদ পড়বেন গরিব মানুষ।’’ সেই সঙ্গেই রাজ্যে এসআইআর হবে না জানিয়ে কমিশনের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘এখানে একটা নাম বাদ গেলে এক লক্ষ বাঙালি কমিশন ঘেরাও করবে!’’ দলের জেলা সভাপতি, চেয়ারম্যান, সাংসদ ও বিধায়কদের এ দিন ফের এই ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘তিনি একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের উত্তরাধিকারী। তিনি হুঁশিয়ারি দিতেই পারেন। তিনি বলতেই পারেন, মৃত বলে কি মানুষ নন! রোহিঙ্গারা কষ্টে ছিলেন বাংলাদেশে। আমরা তাদের জায়গা দিয়েছি, ভোটার তালিকায় নাম তুলে দিয়েছি। ওদের নাম কেন বাদ যাবে! বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের মানবিক মুখ নিয়ে দেখতে হবে। তাদের নাম বাদ দেওয়া যাবে না। কিন্তু এটা তো নির্বাচন কমিশনের বিষয়। তারা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।’’
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে কংগ্রেসও। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী কর্নাটকে ভোট ‘চুরি’র পক্ষে যে ‘প্রমাণ’ দিয়েছেন, তাকেই সামনে রেখে কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে এ দিন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে যুব কংগ্রেস। সংগঠনের নেতা অর্ঘ্য গণ, কাশিফ রেজাদের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সামনে থেকে মিছিল করে কমিশনের দফতরের কাছে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সেই বিক্ষোভে শামিল হয়ে যুব কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অমিতাভ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস সব সময়েই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা অক্ষুণ্ণ রাখতে চেয়েছে। দেশের নির্বাচনী সংস্কার করেছিলেন টি এন সেশন, কংগ্রেসের সরকার তাঁকে কখনও দলের তাঁবেদারি করতে চাপ দেয়নি। আমরা বাংলাতেও কমিশনের নিরপেক্ষতা চাই। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা চাই। রাহুল গান্ধী যে ভাবে কমিশনের ‘ভোট চুরি’ প্রমাণ করে দিয়েছেন, সেটা মাথায় রেখে বাংলার মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।’’ একই বিষয়ে যুব কংগ্রেসের নেতা সৌরভ প্রসাদের নেতৃত্বে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ক্রসিংয়ের কাছে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এক দল নেতা-কর্মী।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রথম প্রয়াণ বার্ষিকীতে আয়োজিত স্মরণ-সভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আবার ডাক দিয়েছেন, ‘’১৮ বছরে ভোটাধিকারের লড়াইয়ে যুব আন্দোলনের নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। প্রান্তিক, বঞ্চিত অংশের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে আজ এসআইআর-এর মাধ্যমে। তার বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে শ্রদ্ধা জানাতে হবে বুদ্ধদেবকে।’’
ভোটার তালিকা সংশোধন ছাড়াও অভিষেক রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। আবাস, কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের মতো জল- জীবন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আটকে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তৃণমূল সাংসদেরা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কাছে ফের রাজ্যের তরফে দাবি জানাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতিও পানীয় জল সরবরাহের ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ চালু করার জন্য সাংসদ তহবিল থেকে এক কোটি, বিধায়ক তহবিল থেকে ১০ লক্ষ ও জেলা পরিষদের ব্যয় বরাদ্দের পাঁচ শতাংশ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি দলের নেতা ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের ৫০% টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু কেন্দ্র তারও মাত্র ৫০% দিয়েছে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে এই অর্থ প্রয়োজন।