বিধান সরকার: স্কুলেই হবে এবার আদা রসুন চাষ,চাহিদা মেটাতে নয়া উদ্যোগ রাজ্যের। বিরোধীদের কটাক্ষ, স্কুলে আর পড়াশোনা হোক চায় না সরকার। পশ্চিমবঙ্গে যে পরিমাণ আদা, রসুন, পিঁয়াজ লাগে তার থেকে কম উৎপাদন হয়। তাই বাইরে থেকে আমদানী করতে হয়। পিঁয়াজ চাষে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা অনেকদিন ধরে চলছে।মূলত সংরক্ষণের সমস্যার কারণে পিঁয়াজ চাষে উৎসাহী হন না চাষীরা। তাই নাসিক নির্ভরতা কাটেনি।
আলু যেমন হিমঘরে সংরক্ষণ করা যায় পিঁয়াজে তা হয় না। আদা- রসুন বঙ্গে যা উৎপাদন হয় তাতে প্রয়োজন মেটে না। তাই রাজ্য সরকার এবার স্কুলে আদা-রসুন চাষ করতে চাইছে। অনেক স্কুলে মিড ডে মিলের জন্য কিচেন গার্ডেন করা হয়। যেখানে নানা ধরনের শাক সব্জি চাষ হয়। এবার সেখানে আদা রসুনও হতে পারে। হুগলি জেলার মাটি অত্যন্ত উর্বর। এখানে আলু, পিঁয়াজ, সব্জি ফল চাষ খুব ভালো হয়।
সেই জেলাতেই প্রথম আদা ও রসুন চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হল স্কুল পড়ুয়াদের। চুঁচুড়ায় জেলা উদ্যান পালন দফতরে তার উদ্বোধন করলেন রাজ্যের উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের মন্ত্রী অরূপ রায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ও হুগলি জেলা উদ্যান পালন দফতরের উদ্যোগে স্কুল পড়ুয়াদের আদা ও রসুন চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হল রাজ্যে প্রথম। প্রথম পর্যায়ে হুগলির কুড়িটি স্কুলের পড়ুয়াদের এই চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মগরা প্রভাবতী বালিকা বিদ্যালয় ও চুঁচুড়া সুকান্তনগর অনুকূলচন্দ্র শিক্ষাশ্রম এই দুটি স্কুলের পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় প্রথম দিন।
জেলা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে খবর, হুগলি জেলায় আদার চাষ হয় ১৫৫ হেক্টর জমিতে। আদা উৎপাদন হয় ৮০০ মেট্রিক টন। রসুন চাষ হয় ৪৭৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ৪ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন। মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, আমাদের রাজ্যে আদা ও রসুনের উৎপাদন কম। এক সময় এই ফসলের দাম অনেক বেড়ে যায়। রসুন চারশ টাকা কিলো হয়েছিল। পিঁয়াজ একশ টাকা। সাধারণ মানুষের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। গরিব মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আদা, রসুন চাষের জন্য উদ্যোগী করা হচ্ছে।
রাজ্যের প্রতিটা স্কুলকে যদি এই চাষে যুক্ত করতে পারি আদা রসুনের অভাব হবে না। স্কুলে যদি বাগান থাকে তাহলে তারা বাগানে চাষ করবে আর যদি বাগান না থাকে তাহলে স্কুলের ছাদ বা বারান্দায় চাষ করা যাবে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গ্রোব্যাগ ও বীজ দিয়ে স্কুলগুলিকে সাহায্য করা হবে। দফতরের সচিবকে আমি অনুরোধ করেছি মাশরুম চাষের জন্য উৎসাহ বাড়াতে। তাতে পড়ুয়ারা যেমন প্রোটিন পাবে তেমনি কম দামে সবজি খেতে পারবে। স্কুলের আদা চাষের উদ্বৃত্ত তারা বিক্রি করতে পারবে। এর জন্য স্কুলগুলিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তথাকথিত শিক্ষার সঙ্গে কৃষি কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ানো যাবে।
চুঁচুড়া সুকান্ত নগর অনুকূলচন্দ্র স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নয়ন মনি সরকার বলেন, স্কুলে আদা ও রসুন চাষ শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতেও এই চাষ করা যাবে। একদিকে যেমন প্রতিবেশীরাও জানতে পারবে তারাও এই চাষ করতে পারবে। স্কুলে কিচেন গার্ডেন রয়েছে, এর সঙ্গে আদা ও রসুন চাষ করলে আমাদেরই সুবিধা হবে। স্কুলের শিক্ষক হাসমত আলী বলেন, খুব কম খরচে সহজ সরল পদ্ধতিতে আদা ও রসুন চাষ করা যায়। আমরা স্কুলের ছাদে শাকসবজি চাষ করি। এই ফসল চাষ করলে বছরে মিড ডে মিলে অনেকটা সাশ্রয় হবে। উদ্বৃত্ত ফসল যদি বিক্রি করা যায় তাহলে আমাদের সুবিধা হবে। এতে ছোটরাও স্বনির্ভর হতে পারবে। আগামীতে চাষের প্রতি অন্য ধারণা তৈরি হবে পড়ুয়াদের মধ্যে।স্কুলে যদি মাশরুম চাষ হয় তাতে মিড ডে মিলে অনেকটা সুবিধা হবে।
জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক শুভদীপ নাথ বলেন, দুটি স্কুলকে দিয়ে আমরা উদ্বোধন করলাম। রসুন বাইরে থেকে আনতে হয় তাই এই চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রোব্যাগ এর মাধ্যমে ছাদে, কার্নিশে ও বাগানে চাষ করা যায়। এটা সহজভাবে পরিচর্যা করা যাবে এবং পরিবেশবান্ধব চাষ করা যাবে। এই চাষের ফলে পরনির্ভরতা কমবে। সেই সঙ্গে চাষিদেরও আদা রসুন চাষে উৎসাহ দেওয়া জন্য চাষ করানোর চেষ্টা চলছে।রসুন চাষ বাড়াতে কৃষকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।তারা সহজে বীজ কিনতে পারবেন এফপিও গুলি থেকে।