• হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল মাটির বাড়ি, ঘুমের মধ্যেই শেষ গোটা পরিবার, বৃষ্টি কমলেও দুর্ভোগ কমল না বাংলার এই গ্রামে
    আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ধসে পড়ল আস্ত মাটির বাড়ি। ঘুমন্ত অবস্থায় চাপা পড়ে মৃত্যু হল এক দম্পতির। মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে।মৃত দম্পতির নাম মহম্মদ ইউনুস মল্লিক( ৫৭) ও রিজিয়া বেগম মল্লিক (৫৩)। 

    মঙ্গলবার আনুমানিক ভোর সাড়ে চারটের সময় জামালপুরের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের মাঠ নসিপুর গ্রামের প্রৌঢ় মহম্মদ ইউনুস মল্লিকের মাটির বাড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ঘুমন্ত অবস্থায় ইউনুস দম্পতি চাপা পড়ে যায়। পাড়া পড়শিরা বাড়ি ভেঙে পড়ার শব্দ শুনে ছুটে যান। কিন্তু কোনও ভাবে তাঁদের উদ্ধার করতে পারেননি।শেষে জেসিবি ডাকা হয়। জেসিবির মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া মাটির বাড়ির মাটি সরিয়ে দু'টি দেহ উদ্ধার করা হয়। 

    জামালপুর ব্লক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত বলে জানান। জামালপুর থানার পুলিশ মৃতদেহ দু'টির ময়নাতদন্ত করার জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের পুলিশ মর্গে পাঠায়। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমেছে গোটা এলাকায়।

    স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুল রহমান মল্লিক বলেন, 'লাগাতার ভারী বৃষ্টির জন্যই দেড় তলা মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ে ভোর রাতে। আমরা ছুটে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করার চেষ্টা করলেও কিছুই করতে পারিনি। জেসিবি মেশিন এনে মাটি সরিয়ে দেহ দু'টি উদ্ধার করা হয়।' মৃতা রিজিয়া বেগম মল্লিকের ভাই সেখ ইদ্রিস বলেন, টানা বর্ষণের জন্যই দেড়তলা মাটির বাড়িটি ভেঙে পড়ে। 

    গত দুদিন বৃষ্টির পরিমাণ একটু কমেছে। খানিকটা রোদ ওঠায় কাঁচা মাটিতে টান ধরছে। ভেঙে পড়ছে মাটির বাড়ি। এখনও গ্রামে অনেক মাটি বাড়ি আছে। সব গরিব মানুষ বাড়ি তৈরির টাকা পাননি। অনেকের পুরনো মাটির দোতলা, তিনতলা বাড়ি আছে। আজকাল মাটির বাড়ি মেরামত একটা ঝকমারির কাজ। খরচসাপেক্ষও বটে। কিন্তু চট করে পাকা বাড়ি বানাবার সামর্থ সবার নেই।

    এসময় তাই অনেক মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ে। বিপন্নতা নিয়েই বাস করেন গরিব মানুষ। পূর্ব বর্ধমান জেলার দামোদর অববাহিকায় দক্ষিণ দিকে দক্ষিণ দামোদর অঞ্চল। রায়না, খন্ডঘোষ, জামালপুর, এই এলাকাগুলোয় এ সময় দামোদর, মুন্ডেশ্বরীর জল ধাক্কা মারে। প্লাবিত হয় এলাকাগুলি। 

    রায়নার নাড়ুগ্রাম অঞ্চলের পরপর গ্রাম, ত্রিশটির বেশি জলমগ্ন। সেখানে অনেকগুলি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দু'দিন আগে প্রধান ও অন্যরা এসে একটি করে ত্রিপল দিয়ে গেছেন। রায়নারই আদমপুর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।  রবিবার সেখানে ত্রাণ বিলি করতে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। 

    এদিকে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, বাঁকুড়া থেকে পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, হাওড়া থেকে হুগলি, দক্ষিণবঙ্গের বাকি সব জেলাতেই মঙ্গলবার জারি হলুদ সতর্কতা। তবে বুধবার বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্যোগ আরও বাড়তে পারে বৃহস্পতিবার থেকে। বৃহস্পতি-শুক্র দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই বজ্রপাত, ঝড়-জলের সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, ও নদিয়ায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই জেলাগুলিতে ৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে।
  • Link to this news (আজকাল)