• কোচবিহারে ফের নাগরিকত্ব বিতর্ক, অসম ট্রাইবুনালের নোটিশে বিরক্ত পঞ্চায়েত প্রধান!
    আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের একবার নাগরিকত্ব বিতর্কে উত্তাল কোচবিহার। অসমের নলবাড়ি ফরেনার্স ট্রাইবুনাল কোর্টে হাজিরার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা ১ ব্লকের হাজরাহাট ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিনামা বর্মণকে। ২১ দিনের মধ্যে হাজিরা দেওয়ার এই নির্দেশে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ভাঙ্গামোড় এলাকাজুড়ে। একইসঙ্গে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

    ভাঙ্গামোড় দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মিনতি শীল শর্মা, প্রায় ৪০ বছর আগে অসমের নলবাড়ি জেলার অধীর রায়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর তিনি মিনতি রায় নামে পরিচিত হন। কিন্তু ২০১৫ সালে নাগরিকত্ব সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জমা দিতে গিয়ে পদবী বিভ্রাটের জেরে সমস্যায় পড়েন তিনি। তাঁর পরিবার নথি সংশোধনের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করলেও, এনআরসির নোটিশ ও ফরেনার্স ট্রাইবুনালের তলব যেন নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

    মিনতি রায়ের পুত্র রামপদ রায় অভিযোগ করেছেন, “আমরা বারবার গ্রাম পঞ্চায়েতে যাচ্ছি, নথির খোঁজ করছি, কিন্তু ফের বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। মায়ের নাগরিকত্ব নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। আতঙ্কে আছি।”

    এদিনের ওই নোটিশে উল্লেখ রয়েছে, যেহেতু মিনতি রায় ২০১৫ সালে কোচবিহারের হাজরাহাট ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র সংগ্রহ করে অসমে জমা দিয়েছিলেন, তাই ওই নথিপত্র যাচাইয়ের জন্যই স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান বিনামা বর্মণ-কে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। তবে প্রধান জানিয়েছেন,“আমি এখনও অফিসিয়ালি কোনও নোটিশ পাইনি। নোটিশ এলে বিডিওর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

    এই ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলে ক্ষোভ তীব্র আকার নিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক অভিযোগ করেছেন,“অসম সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলা তথা কোচবিহারের রাজবংশী মানুষদের এনআরসি ও ফরেনার্স নোটিশ দিয়ে হয়রানি করছে। এবার তারা সীমা অতিক্রম করে পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রধানকে ফরেনার্স কোর্টে হাজিরার নোটিশ পাঠিয়েছে। এটা বরদাস্ত করা হবে না।”

    তিনি আরও জানান,“বুধবার সকাল ৯টায় আমরা হাজরাহাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ির সামনে জমায়েত করব এবং অসম সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করব।”

    এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছে, এটি শুধুমাত্র নথি যাচাইয়ের বিষয় নয়, এর পেছনে রয়েছে বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। একদিকে যেমন এনআরসি প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে, তেমনি অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগও সামনে আসছে। বিশেষ করে, একজন নির্বাচিত মহিলা প্রধানের নামে নোটিশ পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে স্থানীয় মহল।

    নাগরিকত্ব নিয়ে এমন বিতর্ক নতুন নয়, তবে এবার সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নামে ফরেনার্স ট্রাইবুনালের নোটিশ ঘিরে যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আগামী দিনে রাজ্য-অসম সীমান্ত রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ঘটনা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এভাবে যদি রাজ্যের বাইরে বসে কোনও সরকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নোটিস পাঠায়, তাহলে প্রশাসনিক কাঠামো কোথায় দাঁড়ায়? নজর এখন রাজ্য প্রশাসনের পদক্ষেপের দিকে।
  • Link to this news (আজকাল)