• উদ্বৃত্ত ফসল ব্যবহার করে প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের লক্ষ্য, কৃষক স্বার্থে রাজ্য সরকারের বড় উদ্যোগ
    আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • মিল্টন সেন, হুগলি: সর্বসুবিধে যুক্ত, উচ্চফলনশীল এই রাজ্যের মাটি। তাই প্রত্যেক মরশুমে অধিক মাত্রায় উৎপাদন হয়ে থাকে ধান, আলু থেকে ভুট্টা, কলা, পেঁপে, টমেটো সহ নানান সবজি। রাজ্যে চাহিদার তুলনায় উৎপাদিত সেই ফসল পরিমাণে অনেকটাই বেশি। ফলে চাষ করার পর কৃষকদের অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। 

    এবার থেকে আর যাতে সেটা না হয় তাই কৃষকের স্বার্থে উদ্বৃত্ত ফসলকে ব্যবহার করার অভিনব উদ্যোগ রাজ্যের। এই প্রসঙ্গে বুধবার হুগলির জেলাশাসক দপ্তরে এক উচ্চপর্যায় বৈঠকের অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যান পালন দপ্তরের মন্ত্রী অরুপ রায়, রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না, জেলাশাসক মুক্তা আর্য্য, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ওঙ্কার সিং মিনা, সাংসদ মিতালী বাগ, জেলা সভাধিপতি রঞ্জন ধারা, উদ্যান পালন এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের সচিব স্মারতী মহাপাত্র প্রমুখ। 

    উপস্থিত ছিলেন জেলার কৃষক এবং কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীরা। বৈঠকের মূল লক্ষ্য, উদ্বৃত্ত কৃষিজ পণ্যকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কৃষিজ শিল্পে রূপান্তরিত করা। বৈঠকে উপস্থিত স্যবসাহি কৃষক সকলের কাছে, তাঁদের উদ্বৃত্ত ফসলকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে শিল্প গড়ে তোলার আবেদন জানানো হয়। 

    শুরুতেই কৃষি বিপণন দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ওঙ্কার সিং মিনা বলেন, আলু চাষের ক্ষেত্রে এই রাজ্য অনেক এগিয়ে। আলু বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে পাঞ্জাব নির্ভরতা কাটাতে হবে। এই রাজ্যেই উন্নত মানের আলু বীজ উৎপাদন সম্ভব। এবং সেটা বাস্তবসম্মত। তিনি আবেদন করেন রাজ্যের কৃষি বিজ্ঞানীরা সকলকে বীজ উৎপাদনে সাহায্য করবেন। এছাড়াও যাঁরা এখনও প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে ভাবছেন বা ছোট্ট আকারে করছেন। অনেকে আবার ফসল রপ্তানি করেন। তাঁরা বড় করে প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে ভাবুন, রাজ্য সরকার সব রকম সাহায্যের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। 

    বৈঠকে কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেছেন, উদ্বৃত্ত আলু, ভুট্টা বা টমেটো ইত্যাদি প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কৃষকদের অনেক বেশি মুনাফা অর্জন করার জায়গা রয়েছে। সেক্ষেত্রে তাঁদের চাষের পর ফসল বিক্রি পর্যন্ত থেমে থাকলে চলবে না। নজর দিতে হবে প্রক্রিয়াকরণের দিকে। এরাজ্যের ভুট্টা, আম, টমেটো, কলা, পেঁপে ব্যবহার করে বড় প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। বিশেষ করে আলু ব্যবহার করে শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। টমেটো ব্যবহার করে সস তৈরি সম্ভব। একইসঙ্গে আলু ব্যবহার করে চিপস বা অন্যান্য খাদ্য সহজেই তৈরি করা যেতে পরে। 

    প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের তরফে ভর্তুকির ব্যবস্থাও রয়েছে। রাজ্য সরকার তথা জেলা প্রশাসন সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে। রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য কৃষিকে শিল্পে রূপান্তরিত করে তোলা। একইসঙ্গে কৃষকদের লাভবান করা। এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী অরুপ রায় বলেছেন, উদ্বৃত্ত ফসলের জন্য অন্য রাজ্যে রপ্তানি নির্ভরতা কাটাতে হবে। ফসলকে কাজে লাগিয়ে, প্রক্রিয়াকরণ করে কৃষকদের বেশি অর্থ উপার্জনের রাস্তা দেখাবে রাজ্য। 

    পাশাপাশি কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীরাও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে অধিক মুনাফা লাভ করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ মন্ত্রী বলেন, এই রাজ্যে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত্ব ভুট্টা ভিন রাজ্যে রপ্তানি করা হয়। রপ্তানি করা সেই ভুট্টা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কর্নফ্লেক্স রূপে আবার এই রাজ্যেই ফিরে আসে। তাই সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। কৃষিজ পণ্যের প্রক্রিয়াকরণের দিকে নজর দিতে হবে। রাজ্য সরকার পাশে রয়েছে। কৃষকদের মুনাফা বাড়বে আগামী দিনে কোনরূপ সমস্যা আর হবে না। সবরকম সহায়তার জন্য রাজ্য সরকার প্রস্তুত।   ছবি পার্থ রাহা
  • Link to this news (আজকাল)