পাঁচদিন ধরে মাকে নিয়ে ঘরবন্দি যাদবপুরের ছাত্র, পচা গন্ধ পেয়ে পুলিশকে জানালেন প্রতিবেশীরা
আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলকাতার রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ডের ছায়া এবার মুর্শিদাবাদ জেলায়। মৃত মায়ের দেহ আগলে বসে রইলেন তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে। বুধবার সকালে বন্ধ ওই বাড়ির ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করলে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের খবর দেন। পুলিশ এসে বাড়ির ভেতর ঢুকতেই সকলে চমকে যান। দেখা যায় ওই বাড়ির মালিক বাসন্তী সাহার (৬০) পচাগলা দেহ আগলে বসে রয়েছেন তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে সুজয় সাহা (৩০)। ঘটনাটি ঘটেছে সামশেরগঞ্জ থানার নিমতিতা পঞ্চায়েতের কর্মকার পাড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এক সময় সুজয় পড়াশোনা যথেষ্ট মেধাবী ছিলেন এবং তিনি কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও একটি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতেন। পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সুজয়ের কিছু মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তারপর থেকেই তিনি সামশেরগঞ্জের বাড়িতে নিজের মায়ের সঙ্গে থাকতেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজয়ের এক ভাই রয়েছে। কিন্তু মানসিক রোগী সুজয় তাঁর ভাই বাড়িতে থাকলেই তাঁকে মারধর করতেন। এই কারণে বাড়ি ছেড়ে সুজয়ের ছোট ভাই বর্তমানে রঘুনাথগঞ্জ থানা এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। সামশেরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে মা এবং দাদার সঙ্গে তাঁর খুব কম যোগাযোগ ছিল। মৃত বাসন্তীদেবীর প্রতিবেশীরা বলেন, সুজয়ের মানসিক ভারসাম্যহীনতা অত্যন্ত প্রকট ছিল। তবে বাসন্তীদেবীরও অল্প মানসিক সমস্যা ছিল। সেই কারণে মা এবং ছেলে কেউই পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুব বেশি মেলামেশা করতেন না।
বাসন্তী সাহার এক প্রতিবেশী জানান, 'গত ৪-৫ দিন ধরে মা এবং ছেলেকে বাড়ির বাইরে দেখতে পাইনি এবং বাড়ির ভিতর থেকেও কোনও সাড়া -শব্দ আমরা পাচ্ছিলাম না। দু'জনেই যেহেতু মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন তাই আমরা বিষয়টিতে কোনও গুরুত্ব দিইনি। আজ ওই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশকে আমরা খবর দিই। আমরা জানি না ওই মহিলার কীভাবে মৃত্যু হয়েছে।' সামশেরগঞ্জ থানার এক আধিকারিক যদিও ইঙ্গিত করেছেন, ওই মহিলাকে তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে সুজয় খুন করেও থাকতে পারেন। যদিও বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ। তিনি জানান , মৃতদেহটি দেখে আমাদের মনে হয়েছে ওই মহিলার কমপক্ষে ৪-৫ দিন আগে মৃত্যু হয়েছে। দেহটিতে ভয়ঙ্কর রকমের পচন ধরে গিয়েছিল। ওই মহিলার শরীরে কোনও আঘাত রয়েছে কিনা তা বোঝা সম্ভব হয়নি।
ওই আধিকারিক আরও জানান , কিছুদিন আগে সুজয়ের পরিবারের এক সদস্যের তরফে আদালতে একটি মামলা করা হয়েছিল এবং তাঁর চিকিৎসার জন্য মানসিক চিকিৎসার হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছিল। এদিন আদালতের আদেশ পালন করার জন্য আমরা যখন ওই বাড়িতে যাই তখন বাসন্তীদেবীর বাড়ির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। বাড়ির ভেতরে ঢুকে আমরা দেখতে পাই সুজয় সাহা মৃত মায়ের দেহের পাশে বসে রয়েছেন। মায়ের যে মৃত্যু হয়েছে সেই বিষয়ে তাঁর কোনও অনুভূতি ছিল না।
সামশেরগঞ্জ থানার পুলিশ ইতিমধ্যে বাসন্তীদেবীর দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জঙ্গিপুর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এর পাশাপাশি মানসিক ভারসাম্যহীন সুজয়কে চিকিৎসার জন্য বহরমপুরে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য পাঠানো হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের নিমতিটা অঞ্চল সভাপতি সামিউল হক বলেন ,'সুজয় দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে কেউ গেলে প্রচন্ড চিৎকার করতেন। মাঝেমধ্যে ওই যুবককে বেঁধে রাখাও হত যাতে কাউকে আক্রমণ না করে বসেন। তবে সুজয়ের মায়ের কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা আমরা জানি না। '