'তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়ার কোনও প্রশ্নই নেই। এই দল তৈরির পিছনে আমারও অবদান আছে। আর এই দলে মমতা ব্যানার্জি জিন্দাবাদ ছাড়া অন্য কোনও শব্দও আসে না'। তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া বা না ছাড়া নিয়ে বাজারে ঘুরে বেড়ানো নানারকম 'রটনা' নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার আজকাল.ইন-এর সঙ্গে কথা বলার সময় কল্যাণ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, 'মমতা ব্যানার্জি ছাড়া অন্য কিছু জানি না। আমি শুধু লোকসভায় দলের চিফ হুইপ-এর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। অন্য কিছু নয়।'
চলতি সপ্তাহে সোমবার দলের সাংসদদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হন তৃণমূল সুপ্রিমো এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। যেখানে মমতা লোকসভায় দলের মধ্যে কো-অর্ডিনেশন বা সমন্বয়সাধনের উপর আরও বেশি জোর দিতে বলেন। এই বৈঠকের পরেই কল্যাণ চিফ হুইপ-এর পদ থেকে ইস্তফা দেন। কল্যাণ নিজে এই প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, 'দিদি (পড়ুন মমতা ব্যানার্জি) জানিয়েছেন লোকসভায় দলের কো-অর্ডিনেশন ঠিকমতো হচ্ছে না। আঙুল তুলেছেন আমার দিকে। তিনি যখন মনে করছেন ঠিকঠাক সমন্বয়সাধন হচ্ছে না তখন আমি সরেই গেলাম।' কল্যাণের এই সিদ্ধান্তের পরেই সরগরম হয়ে ওঠে রাজনৈতিক মহল। সামাজিক মাধ্যমে ঘুরতে থাকে একাধিক কথা। জল্পনা আরও বেড়ে যায় যখন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজে এপ্রসঙ্গে বলেন, কল্যাণ ২০১১ সালের আগে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছেন।
ফলে ভবিষ্যতে কল্যাণ তৃণমূল ছাড়তে পারে এরকম কথাও ঘুরতে থাকে বাজারে। বুধবার এবিষয়ে সরাসরি শ্রীরামপুরের সাংসদকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, 'এই অবান্তর প্রশ্নগুলো করবেন না। তৃণমূল ছাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। দল যদি কোনদিন তাড়িয়ে দেয় বা অপমান করে তবে রাজনীতি করাই ছেড়ে দেব। তবু অন্য কোনো দলে যাব না।' তাঁর কথায়, 'মনে রাখবেন আমি কিন্তু ২০১১ সালের পর অন্য কোনও দল থেকে এসে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিইনি।'
ইতিমধ্যেই মুখ্য সচেতকের পদ থেকে কল্যাণের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেছে দল। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের আরেক সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। কল্যাণ বলেন, 'আমাকে অনেক মামলা করতে হয়। যেগুলি হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট দুই আদালতেই হয়। সেগুলি এখন মন দিয়ে করতে পারছি। ভাল আছি। দয়া করে খোঁচাবেন না।'
রাজনৈতিক দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন হওয়ার পর প্রথমদিন থেকেই দলের সঙ্গে আছেন কল্যাণ। ঘাসফুলের প্রতীকে তিনি শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রথমবার সাংসদ হয়েছিলেন ২০০৯ সালে। ২০০৯ থেকে ২০২৪, টানা চারবার সাংসদ হিসেবে তিনি শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে সংসদে গেছেন। এর পাশাপাশি দলের হয়ে লড়েছেন বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলাও। যার মধ্যে অন্যতম হল সিঙ্গুরের জমি মামলা। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে যখন তৃণমূল কংগ্রেস থেকে একাধিক নেতা-মন্ত্রী বেরিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন তখন দলের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বুক চিতিয়ে রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাঁর কথায়, 'মমতা ব্যানার্জিকে দেখেই আমি রাজনীতি করি। রাজনৈতিক জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনিই আমার নেত্রী'।