• বাজারে বাজারে আদা রসুনের চাহিদা পূরণ করতে অভিনব উদ্যোগ রাজ্যের 
    আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • মিল্টন সেন, হুগলি,৭ আগস্ট: বন্ধ করে দেওয়া হবে আদা ও রসুনের আমদানি। এবার স্কুলে স্কুলে হবে আদা রসুন চাষ। চাহিদা মেটাতে নয়া উদ্যোগ উদ্যান পালন দপ্তরের। পশ্চিমবঙ্গে যে পরিমাণ আদা রসুন পিঁয়াজ প্রয়োজন হয়, উৎপাদন হয় তাঁর থেকে অনেক কম। তাই প্রয়োজন মেটাতে প্রত্যেক বছর ভিনরাজ্য থেকে আমদানি করতে হয়। রাজ্যের তরফে পিঁয়াজ চাষে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা অনেক দিন ধরেই চলছে। আলু যেমন হিমঘরে সংরক্ষণ করা যায়। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়। তাই সংরক্ষণ সমস্যার কারণে পিঁয়াজ চাষে উৎসাহী হন না রাজ্যের কৃষকরা। তাই পেঁয়াজের ক্ষেত্রে নাসিক নির্ভরতা বরাবরই নজরে পড়েছে। আদা রসুনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বঙ্গে যা উৎপাদন হয় তাতে প্রয়োজন মেটে না। আমদানি করতে হয়। তাই রাজ্য সরকারের তরফে এবার স্কুলে আদা রসুন চাষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক স্কুলে মিড ডে মিলের জন্য কিচেন গার্ডেন করা হয়। যেখানে নানা ধরনের শাক সবজি চাষ হয়। এবার থেকে সেখানে আদা রসুনও হতে পারে। 

    হুগলি জেলার মাটি অত্যন্ত উর্বর। এখানে আলু পিঁয়াজ সবজি ফল চাষ খুব ভাল হয়। সেই জেলাতেই প্রথম আদা ও রসুন চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হল স্কুল পড়ুয়াদের। চুঁচুড়ায় জেলা উদ্যান পালন দপ্তরে বুধবার সেই প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন রাজ্যের উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের মন্ত্রী অরূপ রায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে ও হুগলি জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের উদ্যোগে রাজ্যে এই প্রথম স্কুল পড়ুয়াদের আদা ও রসুন চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হল। প্রথম পর্যায়ে হুগলির কুড়িটি স্কুলের পড়ুয়াদের এই চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রথম দিন মগরা প্রভাবতী বালিকা বিদ্যালয় ও চুঁচুড়া সুকান্তনগর অনুকূলচন্দ্র শিক্ষাশ্রম এই দুটি স্কুলের পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জেলা উদ্যান পালন দপ্তর সূত্রে খবর, হুগলি জেলায় আদার চাষ হয় ১৫৫ হেক্টর জমিতে। আদা উৎপাদন হয় ৮০০ মেট্রিক টন। রসুন চাষ হয় ৪৭৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ৪ হাজার ৭০৮ মেট্রিক টন।

    মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‌আমাদের রাজ্যে আদা ও রসুনের উৎপাদন কম। এক সময় এই ফসলের দাম অনেক বেড়ে যায়। রসুন চারশো টাকা কিলো হয়েছিল। পিঁয়াজ একশো টাকা। সাধারণ মানুষের পক্ষে তখন কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। দাম গরিব মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আদা ও রসুন চাষের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের প্রতিটা স্কুলকে যদি এই চাষে যুক্ত করতে পারি আদা রসুনের অভাব হবে না। স্কুলে যদি বাগান থাকে তাহলে তারা বাগানে চাষ করবে। আর যদি বাগান না থাকে তাহলে স্কুলের ছাদ বা বারান্দায় চাষ করা যাবে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গ্রোব্যাগ ও বীজ দিয়ে স্কুলগুলিকে সাহায্য করা হবে। দপ্তরের সচিবকে আমি অনুরোধ করেছি মাশরুম চাষের জন্য উৎসাহ বাড়াতে। তাতে পড়ুয়ারা যেমন প্রোটিন পাবে তেমনি কম দামে সবজি খেতে পারবে। স্কুলের আদা চাষের উদ্বৃত্ত তারা বিক্রি করতে পারবে। এর জন্য স্কুলগুলিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তথাকথিত শিক্ষার সঙ্গে কৃষি কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ানো যাবে।’‌ চুঁচুড়া সুকান্ত নগর অনুকূলচন্দ্র স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নয়ন মনি সরকার বলেছে, স্কুলে আদা ও রসুন চাষ শিখে বাড়িতেও এই চাষ করা যাবে। প্রতিবেশিরাও জানতে পারবে। তারাও এই চাষ করতে পারবে। স্কুলে কিচেন গার্ডেন রয়েছে। সেখানে আদা ও রসুন চাষ করলে সুবিধা হবে। স্কুলের শিক্ষক হাসমত আলি বলেন, খুব কম খরচে সহজ সরল পদ্ধতিতে আদা ও রসুন চাষ করা যায়। স্কুলের ছাদে শাকসবজি চাষ করা হয়ে থেকে। এই ফসল চাষ করলে বছরে মিড ডে মিলে অনেকটা সাশ্রয় হবে। উদ্বৃত্ত ফসল যদি বিক্রি করা যায় সেক্ষেত্রে সুবিধা হবে। এতে ছোটরাও স্বনির্ভর হতে পারবে। আগামীতে চাষের প্রতি পড়ুয়াদের ধারণা তৈরি হবে। যদি মাশরুম চাষ হয় তাতে মিড ডে মিলে অনেকটা সুবিধা হবে। জেলা উদ্যান পালন দপ্তরের আধিকারিক শুভদীপ নাথ বলেছেন, দুটি স্কুলকে দিয়ে প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। রসুন বাইরে থেকে আনতে হয় তাই এই চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রোব্যাগ এর মাধ্যমে ছাদে, কার্নিশে ও বাগানে এই চাষ করা যায়। সহজভাবে পরিচর্যা করা যাবে। পরিবেশবান্ধব চাষ। এই চাষের ফলে পরনির্ভরতা কমবে। সেই সঙ্গে কৃষকদেরও আদা রসুন চাষে উৎসাহ দেওয়ার জন্য চাষ করানোর চেষ্টা চলছে। রসুন চাষ বাড়াতে কৃষকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তারা সহজে বীজ কিনতে পারবেন এফপিও গুলি থেকে। স্কুলের ক্ষেত্রে চাষের সবটাই সরকারি সাহায্যে হবে।

    ছবি:‌ পার্থ রাহা

     
  • Link to this news (আজকাল)