ঘোষণা হয়েছিল, তাও স্টেশনে দাঁড়াল না ট্রেন! বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেলেন যাত্রীরা
আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
মিল্টন সেন, হুগলি: প্ল্যাটফর্মে না থেমে সোজা গতি বাড়িয়ে এগিয়ে গেল লোকাল ট্রেন৷ বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেলেন যাত্রীরা। স্টেশনে থামার কথা থাকলেও কেনও চালক ট্রেন থামালেন না। কী কারণ, খতিয়ে দেখছে রেল কর্তৃপক্ষ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় আপ হাওড়া গোঘাট লোকাল কোন্নগর স্টেশনের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে আসার কথা ছিল৷ সেই মর্মে ঘোষণা করা হয়। কোন্নগর স্টেশনের তিন নম্বর লাইনের উপর দিয়ে পারাপার করে এক ও দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে যান অনেক যাত্রীই৷ তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে আপ গোঘাট লোকাল আসার খবর ঘোষণাও করা হয়৷ ফলে ট্রেন প্ল্যাটফর্মে থামবে নিশ্চিত জেনে অনেক রেল যাত্রীই ৩ নম্বর লাইন পেরিয়ে যাতায়াত করছিলেন।
কিন্তু স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রীদের অবাক করে দিয়েই প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে এগিয়ে যায় গোঘাট লোকাল৷ ট্রেন স্টেশন ছেড়ে এগিয়ে যেতে দেখে কার্যত হুড়োহুড়ি পড়ে যায় লাইন পারাপার করা যাত্রীদের মধ্যে। ভাগ্যক্রমে সেই সময় রেল লাইনের উপর কেউ না থাকায় বড় বিপদ ঘটেনি৷
ট্রেন স্টেশন ছাড়িয়ে চলে যাওয়ায় ট্রেনে থাকা যাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়ায়৷ ট্রেনের বেশ কয়েকটি কামরা প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে গিয়ে দাঁড়ায়৷ ওই অবস্থাতেই আতঙ্কিত একাধিক যাত্রী ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামার চেষ্টা করেন৷ যদিও পরে স্টেশন কর্তৃপক্ষ মাইকে ঘোষণা করেন, ট্রেনকে পিছিয়ে প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা হবে৷ এরপর ট্রেনটি পিছিয়ে ফের প্ল্যাটফর্মে আনা হয়৷ ট্রেন ফিরিয়ে প্ল্যাটফর্মে আসতেই চালককে ঘিরে শুরু হয় যাত্রীদের বিক্ষোভ। যাত্রীদের ওঠানামার পর ফের গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয় ট্রেনটি৷
প্রসঙ্গত, গত বছর জুলাই মাসে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল হুগলিতে। গাফিলতি যারই হোক, চরম হয়রানির শিকার হলেন যাত্রীরা। স্টপেজে না দাঁড়িয়ে দ্রুত গতিতে ছুটল ট্রেন। অনেকেরই চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে গন্তব্যে নেমে পড়ার চেষ্টা দ্রুত গতির কারণে ব্যর্থ হয়। ট্রেন গিয়ে দাঁড়ায় নির্ধারিত স্টেশনের পরের স্টেশনে। সেখানে থেকে আবার ট্রেন ফিরে আসে আগের স্টেশনে। নামায় যাত্রীদের। অবাক করা এই ঘটনাটি ঘটেছে ভর সন্ধ্যায় হাওড়া বর্ধমান মেল শাখায়।
ট্রেনের নম্বর ৩৭৮৪৯ আপ বর্ধমান লোকাল। যে ট্রেনকে নিত্যযাত্রীরা সুপার নামেই চেনেন। সব স্টেশনে এই লোকাল দাঁড়ায় না। হাওড়া ছাড়ার পর প্রথম দাঁড়ায় শ্রীরামপুর। তার পর শেওড়াফুলি, চন্দননগরের পর চুঁচুড়া এবং ব্যান্ডেল দাঁড়ায়। হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল পর্যন্ত মাত্র চারটি স্টপেজ।
জানা গেছে এদিন নির্দিষ্ট সময়ের থেকে দুই মিনিট বিলম্বে অর্থাৎ সাতটা দুই মিনিটে হাওড়া ছাড়ে ট্রেনটি। যেহেতু গ্যালোপিং ট্রেন শহরতলির অনেক অফিস যাত্রী এই ট্রেনে বাড়ি ফেরেন। এক যাত্রী জানান, চন্দননগর পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। ৭ টা ৫৫ মিনিটে ট্রেনটি চুঁচুড়ায় ঢুকলেও না দাঁড়িয়ে সোজা হুগলি চলে যায়। চুঁচুড়ার যাত্রীরা বুঝতে পারেন না কী হল। অনেকে গেটের কাছে চলে আসেন নামার জন্য। কিন্তু ট্রেন তো দাঁড়ায়নি, বেশ গতিতেই ছিল। অবশেষে হুগলিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
সেখান থেকে আবার ৮ টা ১ মিনিটে ট্রেন উল্টো পথে আবার চুঁচুড়ায় ফিরে আসে ট্রেনটি। যাত্রী নামিয়ে দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর গন্তব্যে রওনা দেয়। চালকের ভুলে নাকি অন্য কারণে এই ঘটনা তা খতিয়ে দেখছে রেল। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে ঠিক কী হয়েছিল দেখা হচ্ছে।