আজকাল ওয়েবডেস্ক: এনআরসি, ভোটার তালিকা এবং ভিন রাজ্যে বাংলায় কথা বলার অপরাধে বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ, বিগত কয়েকদিনে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ঝাঁঝাল আক্রমণে বারে বারে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্র যাই করতে চাক, বিজেপি যাই করতে চাক না কেন, মানুষের উপর হেনস্থা তিনি বরদাস্ত করবেন না কোনওভাবে। এতদিন কড়া বার্তা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবারেও সেই বার্তা দিলেন, সঙ্গে আওড়ালেন বাঙালির আবেগের রবীন্দ্রনাথ-নজরুল। মনে করালেন বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, যতই অত্যাচার নেমে আসুক, পরিকল্পনা যত ভয়াবহই হোক না কেন, যে কোনও পরিস্থিতিতে আগলে রাখবেন তিনি। রাজ্যবাসীকে মনে করালেন, ‘সব দেবেন, নিজের ঠিকানা দেবেন না, ভাষা দেবেন না, অস্তিত্ব দেবেন না।‘
বৃহস্পতিবার বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপনের মঞ্চে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একদিকে যেমন মনে করালেন তাঁর জমানায় রাজ্যের মানুষের জন্য সরকারের একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা, তেমনই মনে করালেন, বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ, অকারণ রোহিঙ্গা দেগে দেওয়া, ভোটার তালিকা নিয়ে চালাকি করা মেনে নেবেন না তিনি।
গ্রামীণ আবাস যোজনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই এদিনের গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলেন মমতা। গ্রামীণ আবাস যোজনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, তৃণমূল জমানায় সরকার প্রায় ৪৭ লক্ষ বাড়ি দিয়েছে, নতুন আরও ১২ লক্ষ বাড়ি দিয়েছে, তালিকায় আরও ১৬ লক্ষ। যাঁদের তালিকায় নাম রয়েছে, তাঁরা ডিসেম্বরে অর্ধেক বাড়ির টাকা পেয়ে যাবেন, আবার মে মাসে পাবেন বাকিটা। কেউ বাকি থাকবেন না বাংলায়। ৭৫ লক্ষ বাড়ি করার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকি করে দেবে। ঠিক তার পরেই মমতা বলেন, ‘কেউ যদি বলে আমাদের এখানে ফর্ম ফিল-আপ করুন, আমরা দেব, না জেনে ফর্ম ফিল-আপ করবেন না, আপনার ডিটেলস নিয়ে ভোটার লিস্ট থেকে নাম বাদ দিয়ে দেবে। বলবে এই নাও এনআরসি-র নোটিস নাও।‘ জানিয়ে দেন ‘আদিবাসি, তফশিলি, দলিত, হিন্দু, মুসলমান, শিখ-এনটাইটেলড যাঁরা, নাম তুলতে হবে সকলের।
রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘কেন্দ্রের পরিকল্পনা রয়েছে। যাঁরা ভাবছেন তাঁদের এপিক কার্ড আছে, আর কিছু করতে হবে না। নিয়মটাই বদলে দিয়েছে। নতুন করে আবার নাম তোলার চক্রান্ত চলছে। ভোটার লিস্টে নাম আছে কি না, আগের লিস্ট দেখলে হবে না। নতুন করে নাম তুলতে হবে।‘ ২০০২ সাল পর্যন্ত যাঁদের জন্ম হয়েছে, বাবা-মায়ের জন্ম-শংসাপত্র চাইছে, সময়ের হিসেব করে প্রশ্ন করেন, ওই সময়ের কতজনের কাছে রয়েছে জন্ম-শংসাপত্র?
নয়া আইন প্রণেতা, এক কথায় কেন্দ্রকে চরম কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন- ‘যাঁরা বলছেন, তাঁদের আছে তো। যাঁরা আইন করছেন, তাঁদের আছে তো? তাঁরা সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছেন। তাঁরা কী করবে বুঝবেন খেটে খাওয়া মানুষের কথা?’
‘বাংলা ভাষা বলে কোন ভাষা নেই’, গিত কয়েকদিনে চরম বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা এই প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন মমতা। সোজা প্রশ্ন, তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, রাজা রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোন ভাষায় কথা বলতেন? মন্তব্যকারীদের ‘অপদার্থ’ অ্যাখ্যা দিয়ে মমতার আফশোস, রাজ্যের প্রশাসনিক পদে থাকার জন্য, বহু ক্ষেত্রে ‘নীরবে’ সয়ে যেতে হয় তাঁকে। গুরগাঁও-রাজস্থান-অসম-মধ্যপ্রদেশ, যেখানে যেখানে বাংলার মানুষের উপরের অত্যাচার চলছে, তার হিসেব দিয়ে, ‘ডবল ইঞ্জিন সরকারের চালাকি’ বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যবাসীকে। একইসঙ্গে মঞ্চে দাঁড়িয়ে একে একে আওড়ালেন বাঙালির আবেগের নজরুলের কবিতা, রবি ঠাকুরের গান।