রমজানের আগেই হতে পারে পদ্মাপারের নির্বাচন, তারপরেও কি দূর থেকেই এপারের ভাগীরথীর জল মাপবে বাংলাদেশ?
আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: আগামী ৩১ অগাস্ট মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগীরথী নদী বক্ষে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশ্বের দীর্ঘতম খোলা জলে সাঁতার প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের অতিক্রম করতে হবে দীর্ঘ ৮১ কিলোমিটার পথ। মুর্শিদাবাদ জেলা সন্তরণ সংস্থার আয়োজনে এই প্রতিযোগিতায় প্রতি বছর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিযোগীরা অংশ নেন। তবে এই বছরেও বাংলাদেশের প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ নিয়ে ফের একবার বড়সড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এর আগে প্রতি বছর এই প্রতিযোগিতায় প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে একাধিক সাঁতারু অংশ নিলেও গত বছর বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে সেখান থেকে কোনও প্রতিযোগী অংশ নিতে পারেননি। ডঃ মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন তদারকি সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করার পর এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। যার প্রভাব পড়েছে ভারত ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্কের উপরেও। এই আবহে ফের এই বছরও বাংলাদেশের সাঁতারুদের বিশ্বের দীর্ঘতম সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলা সন্তরণ সংস্থা আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় গত বছর বিভিন্ন কারণে এই ৮১ কিলোমিটার বিভাগে মাত্র ১৮ জন প্রতিযোগী নিজেদের নাম নথিভুক্ত করলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ৮ জন পুরুষ এবং একজন মহিলা প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছিলেন।
মুর্শিদাবাদ জেলা সন্তরণ সংস্থার অন্যতম কর্তা তথা আহিরণ 'স্টার্টিং পয়েন্টে'র আহ্বায়ক সুভাষ লালা বলেন,' ১৯৪৩ সালে মুর্শিদাবাদ জেলায় বিশ্বের দীর্ঘতম সন্তরণ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। প্রথমে ৭৪ কিলোমিটার দূরত্বের এই প্রতিযোগিতা জঙ্গিপুর সদরঘাট থেকে শুরু হয়ে বহরমপুর কে এন কলেজ ঘাটে শেষ হত। তবে পরবর্তীকালে ব্রাজিলের একটি সন্তরণ সংস্থা নিজেদের দেশে ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা শুরু করলে আমরা কিছুদিনের জন্য বিশ্বের দীর্ঘতম সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজনের শিরোপা হারিয়েছিলাম। '
তিনি জানান,' তবে এর কয়েক বছরের মধ্যেই জাতীয় সন্তরণ সংস্থা এবং রাজ্য সন্তরণ সংস্থার অনুমোদন নিয়ে আমাদের আয়োজিত সাঁতার প্রতিযোগিতা মুর্শিদাবাদ জেলার আহিরণ ঘাট থেকে বহরমপুর কে এন কলেজ ঘাট পর্যন্ত ৮১ কিলোমিটার দূরত্বের করা হয়।। এখনও পর্যন্ত এটিই বিশ্বের দীর্ঘতম সন্তরণ প্রতিযোগিতা বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।'
মুর্শিদাবাদ জেলা সন্তরণ সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিবছর মুর্শিদাবাদ জেলায় অনুষ্ঠিত এই সাঁতার প্রতিযোগিতায় নাম দেওয়ার জন্য দেশ-বিদেশের সমস্ত প্রতিযোগীদের জন্য নাম নথিভুক্ত করার শেষ তারিখ থাকে ১৫ অগাস্ট। সুভাষবাবু জানান,'বিশ্বের দীর্ঘতম সন্তরণ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চেয়ে এখনও পর্যন্ত দেশ-বিদেশের ২৫ জন প্রতিযোগী তাদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। এঁদের মধ্যে স্পেন, বেলজিয়াম-সহ বাংলাদেশের ৬ জন প্রতিযোগী রয়েছেন।'
তিনি বলেন,' তবে বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা ইতিমধ্যেই আমাদেরকে ভিসা সংক্রান্ত কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন। সেই সমস্ত সমস্যা মিটলে তবেই বাংলাদেশের সাঁতারুরা ভারতে এসে ৮১ কিলোমিটার দূরত্বের সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।' প্রসঙ্গত,৮১ কিলোমিটার দূরত্বের সাঁতার প্রতিযোগিতায় অতীতে একাধিক বাংলাদেশি সাঁতারু অংশগ্রহণ করেছেন এবং তাঁদের অনেকেই প্রথম তিনটি স্থানের মধ্যে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন। সম্প্রতি ওই দেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে ইউনূস জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারী মাসে তাঁর দেশের নির্বাচনের জন্য তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাবেন। স্বাভাবিকভাবেই এটা মনে করা হচ্ছে অস্থির পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে এবার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে বাংলাদেশ। সুভাষবাবু আরও জানান,' আমরা আশাবাদী বাকি কয়েকদিনের মধ্যে দেশ-বিদেশ থেকে আরও বেশ কিছু প্রতিযোগী ৮১ কিলোমিটার বিভাগে নাম নথিভুক্ত করতে চেয়ে আবেদন জানাবেন।' তবে তিনি জানিয়েছেন , এই প্রতিযোগিতার জন্য যারা নাম নথিভুক্ত করবেন তাঁদের সকলকেই ভাগীরথীর বক্ষে সাঁতার কাটার অনুমতি দেওয়া হয় না। সন্তরণ সংস্থার বিধিবদ্ধ কিছু নিয়ম রয়েছে। সেগুলোতে যে সমস্ত প্রতিযোগী উত্তীর্ণ হতে পারেন তাদেরকেই ৮১ কিলোমিটার বিভাগে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেওয়া হয়।' মুর্শিদাবাদ জেলার বুকে বিশ্বের দীর্ঘতম সন্তরণ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলেও এর আয়োজন করতে এখনও যে জেলা সন্তরণ সংস্থাকে বিপুল আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হতে হয় তা মেনে নিয়েছেন সংস্থার এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য তথা জঙ্গিপুর সাব-কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ নন্দ। তিনি বলেন ,'প্রতিযোগীদের থাকা-খাওয়া, পুরস্কার বিতরণ এবং প্রতিযোগিতার দিন তাঁদের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করতে প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু বিশ্বের দীর্ঘতম এই সাঁতার প্রতিযোগিতায় আমরা তেমনভাবে কোনও স্পনসর পাচ্ছি না।'
তিনি জানান, '৮১ কিলোমিটার দূরত্বের প্রতিযোগিতায় খগেন দত্ত, বুলা চৌধুরীর মতো সাঁতারুরা অংশগ্রহণ করেছেন। আমাদের সংস্থার শংসাপত্র 'ইংলিশ চ্যানেল' কর্তৃপক্ষও গ্রহণ করেন। তবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা এই প্রতিযোগিতার ভবিষ্যতে যাতে আরও শ্রীবৃদ্ধি হয় সেই চেষ্টা করছি। '
সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সাঁতার প্রতিযোগিতার দিন বহরমপুরের সাংসদ ইউসুফ পাঠান ছাড়াও রাজ্যের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী যাতে সাঁতারুদের উৎসাহ দিতে উপস্থিত হন সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। সন্তরণ সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে ,ওই একই দিনে জিয়াগঞ্জ সদরঘাট থেকে বহরমপুর কে এন কলেজ ঘাট পর্যন্ত মহিলা এবং পুরুষদের জন্য পৃথকভাবে ১৯ কিলোমিটার দূরত্বের একটি সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।