'বাংলাভাষীরা আর এখানে থাকতে পারবে না', ভয়ে সর্বস্ব বেচে বাস ভাড়া করে বাড়ি ফিরে এলেন ১০৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক
আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: পেটের তাগিদে অর্থ উপার্জনের জন্য বহু বাঙালি শ্রমিক ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন। এবার সেই পাড়ি দেওয়াটাই হয়ে উঠেছে বিপদের কারণ। চলছে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই। সেই প্রাণ বাঁচাতে গিয়েই হরিয়ানার ধানকোটের ১০২ নম্বর সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ১০৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক তাঁদের কর্মস্থল ছেড়ে কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জে তাঁদের বাড়িতে ফিরে এলেন। ওই রাজ্যে তাঁরা কেউ ছিলেন দিনমজুর আবার কেউ করতেন গাড়ি ধোয়া বা গৃহ সহায়িকার কাজ। কোনওমতে দিন চলে যেত তাঁদের।
কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁদের দিকে এক হুমকি আসে বলে অভিযোগ। শ্রমিকদের অভিযোগ অনুযায়ী বলা হয়, ৭ আগস্টের পর তাঁরা যেখানে থাকতেন সেখানে কোনও বাঙালি আর থাকতে পারবেন না। যদিও সরকারিভাবে এরকম কিছু ঘোষণা করা হয়নি তবুও আতঙ্ক থেকে রক্ষা পেতে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে চাঁদা তুলে ভাড়া করলেন দুটি বাস। এরপর সেই বাস ভর্তি করে রোজগারের আশা পিছনে ফেলে তাঁরা চলে এলেন কোচবিহারে তাঁদের বাড়িতে। তাঁদের চোখেমুখে শুধুই আতঙ্ক। ভবিষ্যত ঘিরছে অনিশ্চিয়তায়।
জানা গিয়েছে, এই ধরনের হুমকির পিছনে না আছে কোনও সরকারি নির্দেশ, না আছে কোনও পুলিশের ঘোষণা। তবু যেন সেখানকার শ্রমিকদের মধ্যে অদৃশ্য আতঙ্কের ছায়া। অভিযোগ, বাংলাভাষী যারা তাঁদের তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হচ্ছে বা তুলে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। স্রেফ ভাষার জন্য তাঁদের দেখা হচ্ছে সন্দেহের চোখে। এরকম কয়েকটি ঘটনা ঘটার পর বাংলার এই পরিযায়ী শ্রমিকরা আর ঝুঁকি নিতে রাজি হননি। বাস ঠিক করতে খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। কিন্তু দেখা যায় ফেরার জন্য বাসের ভাড়া লাগবে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। একসঙ্গে এত টাকা একা কারুর পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। শেষপর্যন্ত সবাই মিলে চাঁদা তুলে কোনওমতে দুটি বাস ভাড়া করে পরিচিত পরিবেশ, কর্মসংস্থান সব পিছনে ফেলে নিজের জেলা কোচবিহারে ফিরে আসেন তাঁরা।
ধাদিয়ালের শ্রমিক মফিজুল হকের অভিযোগ, 'রাতের বেলায় পুলিশ বাঙালিদের তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। পরে শুনতে পাচ্ছি কেউ হাসপাতালে ভর্তি আবার কেউ বা নিখোঁজ। সেজন্যই আর অপেক্ষা না করে এভাবে চাঁদা তুলে বাস ভাড়া করে ফিরে আসলাম।' মহম্মদ সুমন নামে আরেক শ্রমিক জানান, 'কাজের জন্য টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে কোনওমতে থাকতাম। এখন বুঝতে পারছি প্রাণটাই আসল।' জানা গিয়েছে, বহু শ্রমিক আছেন যারা ফিরে আসার বাসভাড়া যোগাড় করতে কেউ সারা জীবনের সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছেন কেউ আবার আত্মীয় স্বজনের থেকে টাকা ধার করেছেন। তাঁরা জানেন না এই ধার ভবিষ্যতে কীভাবে শোধ করবেন! তবু তাঁদের মুখে একটাই কথা, আর যাব না রাজ্যের বাইরে। ঘটনার কথা কানে যেতে নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন।
উল্লেখ্য, কাজের খোঁজে যাওয়া ভিন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের উপর দিন দিন বেড়ে চলেছে অত্যাচার। বাংলাদেশি সন্দেহে কখনও তাঁদের তুলে নিয়ে গিয়ে আবার কখনও তাঁদের বাড়ি এসে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেইসঙ্গে চলছে মারধর। পরিচয়পত্র দেখিয়ে বা নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেখানোর পরেও সন্দেহ যাচ্ছে না। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রতিদিনই কোনও না কোনও শ্রমিক ফিরে আসছেন এরাজ্যে তাঁদের বাড়িতে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের পুলিশ এবিষয়ে চালু করেছে একটি হেল্পলাইন। এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে এরাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু তাও ভিন রাজ্যে এই অত্যাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না।