আজকাল ওয়েবডেস্ক: বন্যা বিদ্ধস্ত ঘাটালে স্কুলে আসতে নৌকার সাহায্য নিচ্ছে পড়ুয়ারা। বাড়ি থেকে নৌকা নিয়ে শুরু হচ্ছে যাত্রা। শেষ হচ্ছে স্কুলে এসে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এইভাবেই তারা স্কুলে যাতায়াত করছে। যা দেখে মুখে কিছু না বললেও মনে মনে যথেষ্টই শঙ্কিত শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তাঁদের প্রার্থনা, পথে যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।
প্রতি বছরই প্লাবিত হয় ঘাটাল। জল ঢুকে যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে তৈরি করতে হয় অস্থায়ী ত্রাণ শিবির। যেখানে নিয়ে যাওয়া হয় বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের। বলতে গেলে ওই এলাকার গোটা জনজীবন এক বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। যার খেসারত দিতে হয় ছাত্র-ছাত্রীদেরও। ধাক্কা খায় তাদের লেখাপড়া। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তাঁদের অভিযোগ, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে জল বেড়ে যাওয়ার জন্য ওই এলাকায় একটি স্কুল তাদের ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা স্থগিত রেখেছিল। কিন্তু অন্য দুটি স্কুলে যথারীতি ক্লাস টেস্ট চলছে।
এইখানেই অভিভাবকদের প্রশ্ন, কেন ওই দুটি স্কুলে পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত রাখা হল না? বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পরেও তো পরীক্ষা নেওয়া যেত। জল পেরিয়ে কীভাবে স্কুলে যাতায়াত করবে ছাত্র-ছাত্রীরা? যদি প্রান্তিক এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের জল পেরিয়ে আসতে গিয়ে কোনো বিপদে পড়তে হয় তবে তার দায় কে নেবে? শিক্ষকদের কথায়, এবারের বন্যাতে স্কুল ছুটি দেওয়া হয়নি। কারণ, নবম থেকে একাদশ শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন-সহ অন্যান্য কাজ চলছে।
বানভাসি ঘাটালের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে গত মঙ্গলবার ওই এলাকার পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। প্রতি বছর ঘাটাল কেন বর্ষার সময় জলের তলায় চলে যায় সেই প্রশ্ন তুলে তিনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও ডিভিসিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির দায় তারা কিছুতেই এড়াতে পারে না। ভবিষ্যতে বন্যা রুখে কীভাবে ঘাটালকে রক্ষা করা যায় এবং তারজন্য কী কী পদক্ষেপ করা যেতে পারে তার একটি প্রাথমিক রূপরেখাও ঘাটাল থেকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে রাজ্য সরকার। এরপর তিনি গিয়েছিলেন ঘাটাল পুরসভার বন্যা কবলিত দু'নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে পৌঁছে তিনি ত্রিপল বিলি করেন।
কার্যত গোটা ঘাটালেই জল একেবারে থৈ থৈ করছে। অলিগলি থেকে বড়ররাস্তা, সব জায়গাতেই জমে আছে জল। বন্যা আটকে ঘাটালকে সচল রাখার জন্য 'ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান'- এর পরিকল্পনা করা হলেও আজ পর্যন্ত তা কার্যকরী করা যায়নি। মঙ্গলবার এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কেন্দ্র কিছুই করেনি। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই প্ল্যানের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নেপালে বৃষ্টি হলে যেমন উত্তরবঙ্গ ভেসে যায় তেমনি ডিভিসি, মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়া হলে দক্ষিণবঙ্গ প্লাবিত হয়ে যায়। তিনি জানান, বন্যার ফলে যেমন মানুষের ক্ষতি হয় তেমনি রাজ্যের কোষাগার থেকেও প্রচুর টাকা খরচ হয়। যদিও তিনি মনে করেন মানুষের অসুবিধাই সবচেয়ে আগে অগ্রাধিকার পাবে।