এবছরই শেষ, বাজারে আর পাওয়া যাবে না ডিম-সহ ইলিশ মাছ, হঠাৎ কেন নেওয়া হল এই সিদ্ধান্ত?
আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইলিশ মাছ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য মৎস্য দপ্তর ও দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন। সমুদ্রে এই মাছের প্রজনন এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং ছোট বা খোকা ইলিশের নিধন রোধে ডায়মন্ড নেটের পরিবর্তে স্কোয়ার নেট ব্যবহার বাধ্যতামূলকভাবে করা হবে। কারণ, এই অভিযোগ বারবার উঠে এসেছে ডায়মন্ড নেট দিয়ে মাছ ধরার ফলে ধানি মাছ, ডিম-সহ ইলিশ মাছ এবং খোকা ইলিশ ধরা পড়ে গিয়ে নিধন হচ্ছে। যার জন্য দিন দিন যেমন মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে।
গোটা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এবং প্রতিকারের উপায় বের করতে শুক্রবার দিঘায় ফিশারম্যান ফ্রি স্টেটাস অ্যাসোসিয়েশন-এর মিটিং হলে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রণব কর, সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস, ভারত সরকারের শিল্প ও বানিজ্য দপ্তরের পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অতনু দাস, পাপরূপ কোম্পানির কো-অর্ডিনেটর শৈবাল গাঙ্গুলি এবং শংকরপুর, কাকদ্বীপ, ওড়িশা, পেটুয়া এবং অন্যান্য এলাকার প্রায় ৫০ জন মৎস্যজীবী। সভাপতি প্রণব কর বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে স্কোয়ার নেট ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে ছোট মাছ ধরা পড়ছে না। তারা সমুদ্রেই থেকে যাচ্ছে এবং বড় হতে পারছে।
যা ভবিষ্যতে উৎপাদন বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হবে। সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস জানান, সংগঠন এই নেট চালু করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের মনে হয় মৎস্যজীবীরাও পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে এবং এই নেট ব্যবহারের সুফল বুঝে তা গ্রহণ করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অতনু দাসের মতে, স্কোয়ার নেট ব্যবহার শুধু মাছ রক্ষাই নয়, এর ব্যবহারের অন্য দিক হল এর ফলে ট্রলারের জ্বালানি খরচও ঘন্টায় দেড়-দুই লিটার কমে যাবে। যা মৎস্যজীবীদের আর্থিক সাশ্রয়ে সহায়ক হবে।
পাপরূপ কোম্পানির কো-অর্ডিনেটর শৈবাল গাঙ্গুলি বলেন, ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা-সহ বিভিন্ন জায়গায় এই নেট চালু হয়ে গিয়েছে। সারা দেশেই যদি এই নেট ব্যবহার চালু করা যায় তবে তা মাছের প্রজনন রক্ষা, ছোট মাছের বৃদ্ধি এবং সমুদ্রের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বড় ভূমিকা পালন করবে। জানা গিয়েছে, এই বৈঠকে প্রত্যেকটি ট্রলার মালিককে স্কোয়ার নেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।
দিঘা উপকূলে বর্ষা ও শরতের সময় প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। বিশেষত আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই মরসুমকে ইলিশের 'পিক সিজন' ধরা হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খোকা ইলিশের অতিরিক্ত শিকার ও সমুদ্রের পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে ইলিশ ধরা পড়ার পরিমাণ কমেছে। সেইসঙ্গে তার আকারও আগের তুলনায় ছোট হয়ে গিয়েছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলিশ মাছ রক্ষা করতে গেলে খোকা ইলিশ বাঁচাতেই হবে। যদি এই ইলিশকে রক্ষা করা যায় তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দিঘায় বড় আকারের ইলিশের সরবরাহ বাড়বে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতেও এর বড় প্রভাব পড়বে।