•  সমাজ মাধ্যমে সহপাঠীদের বিরুদ্ধে মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ, আত্মঘাতী হলেন দেশের নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ...
    আজকাল | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  •  

    আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ার আত্মহত্যা। এবার দেশের নামী বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র   ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইজার)-এর এক ছাত্র এই পথ বেছে নেন। মৃত ছাত্র অনমিত্র রায় উত্তর ২৪ পরগণার শ্যামনগর এলাকার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার রাতে সে একাধিক ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেয়। তড়িঘড়ি সেখান থেকে তাঁকে কল্যাণী এইমসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু ঘটে। তাঁর মৃত্যুর পরেই দানা বেঁধেছে রহস্য। অনমিত্রর পরিবারের তরফে র‍্যাগিং-এর অভিযোগ করা হলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের তরফে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। 

    মৃতের পরিবারের একটি সূত্র জানিয়েছে, অসুস্থতার কারণে অনমিত্র দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খেয়ে আসছিলেন। তাঁকে খেতে হত ঘুমের ওষুধ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রাতেই তাঁকে কল্যাণী এইমসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই আইজার-এর তরফে অনমিত্রর পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। জানানো হয় সে চিকিৎসাধীন। এদিন সকালে যখন তাঁর পরিবারের লোকেরা থানায় আসেন তখন শোনেন তাঁর মৃত্যু হয়েছে। 

    অন্যদিকে সমাজ মাধ্যমে দীর্ঘ একটি পোস্ট করে গিয়েছেন অনমিত্র। সেখানে পিএইচডি'র জনৈক এক ছাত্রকে তাঁর উপর নির্যাতনের জন্য দায়ী করে তিনি লিখেছেন, তিনি এবং তাঁর অনেক সহকর্মীদের সঙ্গে তাঁদের ল্যাবরেটরির ওই ছাত্রের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন।‌ গত ১২ এপ্রিল ল্যাবরেটরিতে পিএইচডির ওই ছাত্র তাঁকে লক্ষ্য করে চিৎকার করছিলেন। অনমিত্রর দাবি, তিনি সে কথা তাঁদের তত্ত্বাবধায়ককে জানিয়েও ছিলেন। পাশাপাশি আইজার অ্যান্টি র‍্যাগিং সেলের কাছেও অভিযোগ নথিভুক্ত করেন। পড়ুয়ার অভিযোগ, এত জায়গায় জানানোর পরেও কিছু লাভ হয়নি। উল্টে তাঁকে স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের এক সদস্য তাঁকে বলেছিলেন, ল্যাবরেটরির সম্মান এর মধ্যে জড়িয়ে আছে। এটা কিন্তু তাঁর আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল। পাশাপাশি ঘটনার জন্য তাঁকেই দোষ দেওয়া হয় বলে অনমিত্রর অভিযোগ। শেষপর্যন্ত অবসাদে ওই পড়ুয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ঘটনার পর অনমিত্রর দিদি দাবি করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রকে গ্রেপ্তার করতে হবে। যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। এবিষয়ে আইজার-এর জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্বতী ভৌমিক বলেন, 'ঘটনাটি খুব দুঃখজনক। আমরা সকলেই এই ঘটনায় মর্মাহত। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কিছু এই মুহূর্তে বলাটা সম্ভব নয়।'

    প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুলাই মাসে আইআইটি খড়গপুরের ছাত্রাবাস থেকে পড়ুয়ার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতের নাম অনিকেত ওয়ালকার। ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড নভেল আর্কিটেকচার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। অনিকেতের বাড়ি মহারাষ্ট্রে। আইআইটি খড়গপুরের হস্টেলেই তিনি থাকতেন।  জগদীশচন্দ্র বসু হলে ২১৪ নম্বর রুম থেকে তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

    এপ্রিল মাসের পর ফের মে মাস। মদনমোহন মালব্য হলের এসডিএস ১৩৫ নম্বর রুম থেকে ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত ছাত্রের নাম, মহম্মদ আসিফ কামার। তাঁর বাড়ি বিহারের শিওহর জেলায়। তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সেখানেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। সহপাঠীরা ওই পড়ুয়ার সাড়াশব্দ পায়নি অনেকক্ষণ। সন্দেহ হওয়ায় তাঁর সহপাঠীরা দরজা ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকি শুরু করেন। সাড়া না পেয়ে সহপাঠীরা কর্তৃপক্ষকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে রবিবার ভোরবেলায় ওই ছাত্রের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে। 

    চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেও খড়গপুর আইআইটি থেকে পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হয়। সেদিন ছেলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বাবা-মা। হস্টেলের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। বারবার ধাক্কা দেওয়ার পর, ফোন করার পরেও মেলেনি তাঁর সাড়া। শেষমেশ দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতেই দেখেন, ছেলের ঝুলন্ত দেহ। মৃত পড়ুয়ার নাম শাওন মালিক। ২০ বছর বয়সি পড়ুয়া ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী পড়ুয়া ছিলেন তিনি।

    চলতি বছরেই পর পর পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে খড়গপুর আইআইটিতে। তারপরে ঠিক একই ঘটনা। সেখানেই ফের উদ্ধার হল পড়ুয়ার দেহ। মৃত্যুর কারণ খুঁজছে পুলিশ। শুরু হয়েছে তদন্ত। 

     
  • Link to this news (আজকাল)