• ‘বছর ঘুরল, মিলল না বিচার’! অভিযোগ তুলে আরজি কর-কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে পথে নামছেন কারা?
    আনন্দবাজার | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • আরজি কর-কাণ্ডের একটি বছর পার। গত এক বছর ধরে ন্যায়বিচার চেয়ে নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন আন্দোলনকারীরা। যাতে শহর এবং শহরবাসী আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ধর্ষণ-খুন হয়ে যাওয়া তরুণী চিকিৎসককে ভুলে না যায়— তা-ই একমাত্র উদ্দেশ্য।

    গত এক বছর ধরে চলছে আরজি-কর কাণ্ডের বিচার। ঘটনার পরে শহর কলকাতা যে ভাবে ‘দ্রোহের আগুন’ জ্বালিয়েছিল, তা কি এখনও জ্বলছে? বিনোদন দুনিয়া থেকে যাঁরা আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা কোথায়? তাঁরা কি প্রতিবাদ জানাবেন? প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হবেন?

    আনন্দবাজার ডট কম কথা বলেছিল বাদশা মৈত্র, দেবদূত ঘোষ, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, সৌরভ পালোধি, শ্রীলেখা মিত্রের সঙ্গে।

    বাদশা কর্মসূত্রে শহরের বাইরে। শনিবারই ফিরছেন শহরে। স্পষ্ট জানিয়েছেন, এ দিন তিনি আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, দুর্গোৎসব, সবই আগের মতো হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হল, এত বড় অন্যায়ের বিচার হল না! প্রতিবাদ আরও তীব্র হওয়া উচিত। কারণ, শহরবাসীর ক্রোধ শুধুই অভিযুক্তের উপরে সীমাবদ্ধ নেই। যারা এত বড় কাণ্ডের প্রকৃত বিচার হতে দিচ্ছে না তাদের উপরেও সমান ক্রোধ সকলের।”

    যদিও প্রতিবাদের ঝাঁজ গত এক বছরে স্তিমিত হয়েছে বলে মানতে নারাজ বাদশা। তিনি মনে করেন, সারা রাজ্য প্রতিবাদ জানাচ্ছে নিজেদের মতো করে। অভিনেতার উপলব্ধি, “গোটা রাজ্য অরাজকতায় ডুবে। তার শিকার প্রত্যেক রাজ্যবাসী। কিন্তু মৃতাকে ভুলে যাননি কেউ। নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন।”

    অভিনেত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তী এই মুহূর্তে ব্যস্ত ধারাবাহিকের কাজে। তাঁকে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে ধারাবাহিক ‘গৃহপ্রবেশ’-এ। শুটিংয়ের ফাঁকে অভিনেত্রী বলেন, “মানসিক ভাবে প্রথম দিন থেকে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে রয়েছি। আফসোস, একটা বছর কেটে গেল। বিচার এখনও হল না।” বিচার যতটুকু হয়েছে, তাতে খুশি নন অভিনেত্রী। তাঁরা অপেক্ষা করে রয়েছেন উচ্চতর আদালতের রায়ের জন্য।

    বিদীপ্তা বলেন, “আমরা কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারব না। তিনটি আদালতে বিচার চলছে। নির্যাতিতার মা-বাবার মতো আমরাও অপেক্ষায়, নিশ্চয়ই ন্যায়বিচার হবে।” সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুটিং চলছে। তাই, আলাদা করে কোনও কর্মসূচির আয়োজন করে উঠতে পারেননি তিনি বা তাঁর সহকর্মীরা, দাবি অভিনেত্রীর। তবে কাজের শেষে কোনও না কর্মসূচিতে তিনি যোগ দেবেন, এমনই ভাবনা বিদীপ্তার।

    শুক্রবার থেকেই শহরের নানা জায়গায় শুরু হয়ে গিয়েছে সভা, প্রতিবাদ মিছিল। দক্ষিণ ভারত থেকে নিজের শহর ফিরেছেন অভিনেত্রী মোক্ষ। শুক্রবার তাঁকে শ্যামবাজারে আয়োজিত এক জন সমাবেশে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে। এ দিন পথে জন সাধারণের সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন আর এক অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত।

    আরজি কর-কাণ্ডের বর্ষপূর্তির মাত্র দু’দিন আগে দ্বিতীয় বার কন্যাসন্তানের বাবা হয়েছেন প্রতিবাদের অন্যতম মুখ চিকিৎসক-অভিনেতা কিঞ্জল নন্দ। এ দিন তাঁর ভূমিকা কী? এক বার্তায় কিঞ্জল লিখেছেন, “রাগ, কষ্ট, হতাশা, ভয়, অভিমান, আক্ষেপ, ভুল বোঝাবুঝি, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক, সময়-অসময়, নেতা-অভিনেতা, মডেল, বিজ্ঞাপন…”, এ সব সরিয়ে শুধু একজন নাগরিক হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন তিনি! নিজের পদক্ষেপ নিয়ে তাঁর কোনও দ্বিধা নেই। নিজের কাছে তিনি স্বচ্ছ। সে কথা তাঁর লেখার প্রতি ছত্রে, “ভবিষ্যতে এটা বলতে পারব, অন্যায় দেখে চুপ করে থাকিনি, প্রতিবাদ করেছি। কোনও নেতা হতে বা নিজের আখের গোছাতে আসিনি। আখের গোছানোর জন্য অনেক সুযোগ পেয়েছি জীবনে। কোনও কিছু পাত্তা দিইনি।”

    উল্লেখ্য, সেই সময় কিঞ্জলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তাঁর প্রতিবাদে শামিল হয়ে নিজেকে প্রচারের আলোয় আনছেন চিকিৎসক-অভিনেতা। সে অভিযোগের জবাব দিয়েই তাঁর আহ্বান, “আসুন সবাই মিলে একটা সুস্থ, সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি। যেখানে কিছু খাঁটি মানুষ পাওয়া যাবে।”

    শনিবার বিকেলে ‘কালীঘাট চলো’ মিছিল পৌঁছে যাবে নির্দিষ্ট অঞ্চলে। খবর, এই মিছিলে হাঁটবেন ঊষসী চক্রবর্তী, দেবদূত ঘোষ, সৌরভ পালোধি, শ্রীলেখা মিত্রের মতো অভিনেতা-পরিচালকেরা। থাকতে পারেন পরিচালক-অভিনেতা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ও। আরজি কর-কাণ্ডের এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর তাঁরা কতটা হতাশ?

    সৌরভের কথায়, “আমি সব সময় আন্দোলন, প্রতিবাদের সঙ্গে আছি। তখনও পথে নেমেছিলাম। আজও পথে নামব। কালীঘাট অঞ্চলে পৌঁছে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।” প্রায় একই কথা শোনা গিয়েছে দেবদূতের মুখেও। শুক্রবার তিনি সোদপুরে আয়োজিত পথসভায় উপস্থিত ছিলেন। কলকাতা কি আদৌ নির্যাতিতাকে মনে রেখেছে? অভিনেতার কথায়, “কলকাতা মনে রেখেছে। সব সময় বিদ্রোহের আগুন দাউদাউ জ্বলে না। নিভৃতে ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে। কলকাতার বুকে সে ভাবেই প্রতিবাদের আগুন জ্বলছে।”

    শ্রীলেখা অকপটে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, “একটা বছর পেরিয়ে গেল। মৃতা তরুণী চিকিৎসক কোথায় ন্যায় পেলেন? আমি ওঁর বাড়িতে গিয়েছি। পরিবারের একজন চিকিৎসক হতে পেরেছিলেন। তাই নিয়ে মা-বাবার গর্বের সীমা ছিল না। চোখের সামনে তাঁদের মেয়ে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়ে মারা গেলেন। ওঁদের মতো আমিও বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)