• দিদিকে উল্টোপাল্টা কথা বলে ‘অনুতপ্ত’ কল্যাণ! শ্রীরামপুরের সাংসদ এ-ও জানালেন, মহুয়া আর তাঁর বলার ‘সাবজেক্ট’ নন
    আনন্দবাজার | ০৯ আগস্ট ২০২৫
  • মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উল্টোপাল্টা কথা বলার জন্য ‘অনুতপ্ত’ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সব কিছুর জন্য কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকেই দায়ী করেছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ। শনিবার হুগলির কোন্নগরে কল্যাণ বলেন, “মহুয়া মৈত্র আমার বিষয় (সাবজেক্ট ম্যাটার) নয়। অনেক সময়, শক্তি এক জন মহিলার জন্য নষ্ট করেছি। তার জন্য অনেকের কাছে খারাপ হয়েছি। দিদিকেও উল্টোপাল্টা বলে ফেলেছি। এটা না-বললেই বোধ হয় ভাল হত।”

    তাঁর এই উপলব্ধির জন্য এক জুনিয়র অ্যাডভোকেটকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কল্যাণ। তাঁর ফোনে আসা ওই জুনিয়র অ্যাডভোকেটের মেসেজ পড়ে শোনান শ্রীরামপুরের সাংসদ। তার পর বলেন, “আমার কাছে একটা জুনিয়র অ্যাডভোকেট ভাই আছে। সে আমাকে একটা টেক্সট করেছিল। সেটা থেকে আমি কিছুটা অনুপ্রাণিত হয়ে বুঝতে পেরেছি মহুয়া মৈত্র এখন আমার কাছে কোনও বিষয় (সাবজেক্ট ম্যাটার) নয়। আমার কাছে এখন অনেক কাজ রয়েছে। রাখির দিন দলনেত্রীর সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে কল্যাণ বলেন, “দিদিকে প্রণাম জানিয়েছি। দিদি আমাকে আশীর্বাদ করেছে। এক বার নয়, তিন বার আশীর্বাদ করেছে।”

    সোমবার দলের সাংসদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। লোকসভায় দলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না বলে জানিয়ে সেই বৈঠকে নিজের অসন্তোষ ব্যক্ত করেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যত ক্ষণ না শারীরিক ভাবে সুস্থ হচ্ছেন, তত ক্ষণ পর্যন্ত অভিষেক লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা হিসেবে কাজ করবেন বলে সেই বৈঠকেই মমতা ঘোষণা করেন। আর নিজেকেই মমতার ‘সমন্বয়’ সংক্রান্ত মন্তব্যের লক্ষ্য হিসেবে মেনে নিয়ে কল্যাণ লোকসভার তৃণমূলের মুখ্য সচেতক পদ থেকে ইস্তফা দেন। সোমবার তিনি বলেছিলেন, ‘‘দলনেত্রী যখন মনে করছেন লোকসভায় সমন্বয় ঠিক মতো হচ্ছে না, তখন তিরটা আমার দিকেই আসছে। তাই আমি ইস্তফা দিচ্ছি।’’ একই সঙ্গে ওই দিন সখেদে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার দরকার ফুরিয়ে গিয়েছে। এ বার দিদিই দল চালান!’’ কাজ করতে কোনও অসুবিধা হওয়ার জন্যই কল্যাণ ওই পদ থেকে ইস্তফা দিলেন কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে মঙ্গলবার অবশ্য কল্যাণ খানিক সাবধানি হয়ে বলেছেন, “না না, সেটা কোনও কথা নয়।”

    মুখ্য সচেতকের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই মহুয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে এক্স হ্যান্ডলে দীর্ঘ একটি পোস্ট করেছিলেন কল্যাণ। মঙ্গলবার মহুয়ার বিরুদ্ধে আরও একটি পোস্ট করেন শ্রীরামপুরের সাংসদ। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে কল্যাণের প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তাঁর নাম না-করে শূকরশাবকের সঙ্গে লড়াইয়ের পরিচিত উপমার উল্লেখ করেছিলেন মহুয়া। গত লোকসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুরে কল্যাণের বিরুদ্ধে বামেদের প্রার্থী ছিলেন জেএনইউ-এর প্রাক্তনী দীপ্সিতা ধর। সেই সময়ে দীপ্সিতা সম্পর্কে কল্যাণের নানা মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সাক্ষাৎকারে কল্যাণের সেই আচরণ এবং মন্তব্য সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মহুয়া বলেছিলেন, ‘‘শূকরশাবকের সঙ্গে কখনও লড়তে নেই। সে চাইবে লড়াই করতে। কিন্তু আপনি তার সঙ্গে যুদ্ধে নামলে নোংরাটা আপনার গায়েও লাগবে।’’ এর পরেই মহুয়া বলেছিলেন, ‘‘নারীবিদ্বেষী, হতাশাগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতা সব দলেই রয়েছেন। সংসদেও তার প্রতিফলন রয়েছে।’’

    মহুয়ার ওই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কল্যাণ সোমবার লিখেছিলেন, “মানুষ দেখুন উনি কী কী শব্দ ব্যবহার করছেন। তার পর তাঁরাই বিচার করুন।” দীর্ঘ পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘সম্প্রতি মহুয়া মৈত্রের মন্তব্য শুনেছি। যেখানে তিনি সহ-সাংসদকে ‘শূকরশাবক’ বলেছেন। যা শুধু অবমাননাকর নয়, সাধারণ নাগরিক রীতির পরিপন্থী।’’

    ঘটনাচক্রে, কল্যাণ মহুয়ার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার আরও একটি পোস্ট করার পরেই মুখ্য সচেতক পদে তাঁর ইস্তফা গ্রহণ করেন দলনেত্রী মমতা। তৃণমূলের তরফে সে কথা জানিয়েও দেওয়া হয়। লোকসভার সেই মুখ্য সচেতক পদে নিয়োগ করা হয় কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে। লোকসভায় দলের উপ দলনেতা নিযুক্ত করা হয় শতাব্দী রায়কে। লোকসভায় তৃণমূলের নবনিযুক্ত দলনেতা হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

    মঙ্গলবার দলীয় সাংসদদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন কল্যাণ। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি যে থাকতে পারব না, তা অভিষেককে জানিয়েছিলাম। অভিষেক বলেছে, ঠিক আছে।’’ ইস্তফাপত্র গৃহীত হওয়ার জন্য দলনেত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন কল্যাণ। আনন্দবাজার ডট কম-কে কল্যাণ বলেন, ‘‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। উনিই আমায় বাঁচিয়ে দিয়েছেন। সংসদে আমি যে ভাবে চিৎকার করতাম, কোনও দিন হয়তো স্ট্রোক হয়ে মরে যেতাম। ঈশ্বর আমায় তা থেকে রক্ষা করলেন।’’ শনিবার কল্যাণ জানিয়েছেন, লোকসভায় আবার আওয়াজ তুলবেন তিনি। তাঁর কথায়, “আবার দেখা যাবে। চিন্তা করার কিছু নেই। এই বারে তো সংসদে (হাউসে) কিছু নেই। খালি চেঁচামেচি আর বন্ধ হয়ে যাওয়া। হাতে প্রচুর কেস (রয়েছে) রয়েছে। আগামী ছ’মাস প্রচুর মামলা হবে। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম হাতে হাত মিলিয়ে মামলা করছে। দিদির উপর যে আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করছে, সেটাকে তো রুখতে হবে।” এর মধ্যে দলের কারও সঙ্গে কথা হয়েছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রীরামপুরের চার বারের সাংসদ বলেন, “পরশু দিন আমার সঙ্গে অভিষেকের দেড় ঘণ্টা কথা হয়েছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)