• নবান্ন অভিযানে ভোগান্তি শহরজুড়ে, পার্ক স্ট্রিট-নিউ মার্কেটে বিজেপির তাণ্ডব, ভাঙচুর তৃণমূলের কার্যালয়
    বর্তমান | ১০ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভাই সেক্টর ফাইভের নামী একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। ছুটি না মেলায় ভাইকে রাখি পরাতে প্রায় সাড়ে চারশো কিলোমিটার পেরিয়ে শনিবার ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতায় এসেছিলেন প্রীতি পান্ডা। কিন্তু হাওড়া স্টেশনের বাইরে আসতেই একেবারে দিশাহারা অবস্থা বছর পঁয়তাল্লিশের আটপৌরে এই মহিলার। চারিদিকে বড় বড় ব্যারিকেড। পুলিসের কড়াকড়ি।  সব রাস্তা বন্ধ। বাস-গাড়ি কিছুই যাচ্ছে না। আর জি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তির দিন তথাকথিত ‘সাধারণ’ মানুষের ডাকা ‘নবান্ন অভিযান’-এ শহরজুড়ে সকাল ১১টা থেকে এমন ভাবেই ভোগান্তির শিকার হতে হল হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে। বিকেলে অভয়া মঞ্চের ডাকে জমায়েত ছিল হাজরা মোড়ে। তাতে ভোগান্তি আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ।

    সাধারণ মানুষের মিছিলকে হাতিয়ার করে বিজেপির একাংশ মাঠে নামবে বলে আগেই আঁচ করেছিল পুলিস প্রশাসন। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সাঁতরাগাছি, হাওড়া ব্রিজ, বিদ্যাসাগর সেতু থেকে শুরু করে ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট, হেস্টিংস সহ নবান্ন সংযোগকারী সমস্ত রাস্তা আটকে দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও বিশাল বিশাল সিকিওরিটি ব্যারিকেড-কন্টেনার বসানো হয়। বেলা বাড়তে না বাড়তে পুলিসের আশঙ্কাই সত্যি হল। পার্ক স্ট্রিট-নিউ মার্কেট এলাকায় কার্যত তাণ্ডব চালাল বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। ভাঙচুর চলল নিউ মার্কেটে তৃণমূলের একটি কার্যালয়েও। মমতা-অভিষেকের ছবি, চেয়ার, ফ্যান সমস্ত কিছু তছনছ করে দেওয়া হয়। চুরি গিয়েছে একটি নতুন টিভি। গ্র্যান্ড হোটেলের সামনে মারধর করা হয়েছে এক চিত্র সাংবাদিককেও।

    দুপুর ১২টায় অভিযান হওয়ার কথা ছিল। যদিও পৌনে একটা পর্যন্ত প্রতিবাদীদের ভিড় সেভাবে নজরে পড়েনি। দুপুর গড়ালে হাওড়ার সাঁতরাগাছি, ধর্মতলার অস্থায়ী ক্যাম্পে বিক্ষিপ্ত ভাবে ৪০-৫০ জনের ছোট ছোট জটলার দেখা মেলে। কিছুক্ষণ পর হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ধর্মতলার অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে পার্ক স্ট্রিটের দিকে এগতে শুরু করে সেই ভিড়। বিকল্প জমায়েত স্থল হিসেবে ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল কলকাতা পুলিস। বিজেপি নেতারা সেখানে আকাশছোঁয়া লোহার ব্যারিকেড দেখেই ছুটলেন পার্ক স্ট্রিট অভিমুখে। অভয়ার মা-বাবাকে সামনে রেখে পার্ক স্ট্রিটে পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করেন কিছু বিজেপি বিধায়ক ও সমর্থকরা। আহত হন বেশ কিছু পুলিসকর্মী। পরবর্তীতে অভয়ার মায়ের মাথায় আঘাত ও তাঁর শাঁখা ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। তবে লালবাজারের দাবি, ধস্তাধস্তিতেই এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। পুলিসের লাঠির ঘায়ে তিনি আহত হয়েছেন এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বরং, বিক্ষোভকারীদের হামলায় পাঁচজন পুলিসকর্মী আহত হয়েছেন। দায়ের হয়েছে সাতটি এফআইআর।

    এরপরেই হাতে গোনা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পার্ক স্ট্রিট অবরুদ্ধ করে বসে পড়েন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে পুলিসের উদ্দেশে উস্কানিমূলক মন্তব্য। মাঝে মধ্যে প্লাস্টিকের বোতলও উড়ে যাচ্ছিল পুলিসের দিকে। এক সময় ব্যারিকেডের দিকে এগিয়ে দেওয়া হয় একদল সাধুকে। ধস্তাধস্তিতে অসুস্থ হয়ে পড়া এক সাধুকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায় পুলিসকেই। সেই সময়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও নগরপাল মনোজ ভার্মার উদ্দেশে চূড়ান্ত অশালীন মন্তব্য করতে শোনা যায় বিরোধী দলনেতাকে। 

    সেই ফুটেজ ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর তীব্র নিন্দা করে তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘উনি তো খারাপ ভাষাতেই কথা বলেন। এসব যত বলবেন বাংলার মানুষ তত বেশি করে বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করবে।’ ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে পুলিসের একাধিক সংগঠন।  
  • Link to this news (বর্তমান)