• রেকর্ড বৃষ্টিতেও তেষ্টা মিটছে না ভূগর্ভের! উদ্বিগ্ন কলকাতার ভরসা সেই কৃষ্ণনগরই
    বর্তমান | ১১ আগস্ট ২০২৫
  • সৌম্যজিৎ সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: চলতি বর্ষার মরশুমে এখনও পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। সাধারণভাবে মনে করা হয়, যত বেশি বৃষ্টি হবে, ততই বৃদ্ধি পাবে মাটির নীচের জলস্তর। ভূবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে ‘ওয়াটার টেবল রিচার্জ’। কিন্তু কলকাতার ক্ষেত্রে তেমন ঘটে না! এত বেশি বৃষ্টি দেখে একটা আশার সঞ্চার হয়েছিল, এর ফলে কলকাতার ভূগর্ভস্থ জলস্তর অনেকটা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয় না বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানী শহরের ভূগর্ভে জলের জোগান আসে নদীয়ার কৃষ্ণনগরের দিক থেকে। সেখানে বেশি বৃষ্টি হলে সহজেই জল ভূগর্ভের নির্দিষ্ট স্তরে গিয়ে জমা হয়।  কারণ, প্রচুর ফাঁকা জায়গা, খাল-বিল-জলাশয় রয়েছে। জলাশয় থেকেই মাটির নীচের নির্দিষ্ট স্তরে জল পৌঁছয় সহজে। ভূগর্ভস্থ জল ধারণকারী শিলা বা মাটির স্তরকে বলা হয় ‘অ্যাকুইফার’। কৃষ্ণনগর অঞ্চলে এই ‘অ্যাকুইফার’ এমনভাবে অবস্থিত যে বৃষ্টির জল ভূগর্ভে গিয়ে গড়িয়ে চলে আসে কলকাতার মাটির নীচে। এই বর্ষাতেও এমনটাই হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

    কলকাতায় ঠিক কতটা ‘গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ’ হল, তা জানতে কিছুদিন বাদেই সমীক্ষা চালাবে স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সুইড)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলকাতার প্রায় সর্বত্রই মাথা তুলেছে একের পর এক বহুতল আবাসন। পাল্লা দিয়ে কমছে জলাভূমি। কংক্রিটের জঙ্গলে বৃষ্টির জল ভূগর্ভে যাওয়ার পথ নেই। তাই শহরে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেও কলকাতার ভূগর্ভে জলস্তরের কোনও উন্নতি হয় না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক পঙ্কজ রায়ের কথায়, ‘বৃষ্টি হলেই যে সেই জল ভূগর্ভে চলে যাবে, এমনটা কিন্তু নয়। তার জন্য লাগে উপযুক্ত পরিবেশ। জলাভূমি থাকলে অনেকটা কাজ হয়। কলকাতায় সেই জলাশয়ের অভাব। কৃষ্ণনগরকে ওয়াটার রিচার্জ বেল্ট বলা হয়। কারণ সেখানকার মাটির নীচে বেশিরভাগ অ্যাকুইফার ঢালু অবস্থায় রয়েছে। তাই সেখানে ভূগর্ভে জল দাঁড়ায় না। গড়িয়ে এসে কলকাতার মাটির নীচে জমা হয়।’

    কলকাতার একটা বড় অংশকে আজও পানীয় জলের জন্য ভূগর্ভস্থ জলের উপরই নির্ভর করতে হয়। সেই সূত্রে বলা যেতে পারে, নদীয়ার ভূগর্ভের জলেই বেঁচে আছে কলকাতার মাটির প্রাণ। মাটির নীচের জল শুকিয়ে গেলে টিউবওয়েল বা পাম্প—সবই অকেজো হয়ে পড়বে। সেই সঙ্গে যত্রতত্র আচমকা ভয়াবহ ধসের ঘটনা (সিঙ্ক হোল) বাড়বে। বিশ্বের নানা জায়গাতেই এখন এই ধরনের ঘটনা সামনে আসছে। আবহাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান বলছে, গত ১ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নদীয়ায় ৪৭০.৯ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। এই সময়কালে  ৯১০.৫ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে কলকাতায়। কিন্তু এরপরও নদীয়া জেলার ভূগর্ভস্থ জলের উপরই নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে কলকাতাকে।
  • Link to this news (বর্তমান)