• জাঁক দেওয়ার জলের অভাব না হওয়ায়, এবার পাটের গুণমান ভালো হওয়ায় লাভের আশায় চাষিরা
    বর্তমান | ১২ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: ভাগীরথীতে জল বেড়েছে। গ্রামীণ নদী নালাগুলিও কানায় কানায় পরিপূর্ণ। বৃষ্টিও এবার পর্যাপ্ত পরিমাণে হয়েছে। জাঁক দেওয়ায় সমস্যা না হওয়ায় পাট চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। চাষিদের দাবি এতে পাটের রং ও গুণগত মান ভালো হবে। সেজন্য ভালো দাম পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন কাটোয়া মহকুমার পাটচাষিরা। 

    গত দু’বছর ধরে বৃষ্টির অভাবে পাটের জাঁক দেওয়া নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। খালবিল, পুকুর, নালাতে সেভাবে জল ছিল না। স্বভাবতই পাটের জাঁক দিতে পারছিলেন না চাষিরা। তাতে পাটের গুণগত মান ভালো না হওয়ায় ভালো দাম পাননি। তবে এবছর পাটচাষিরা উচ্ছ্বসিত। তার মূল কারণ ভাগীরথীতে জল অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ছাড়িগঙ্গা বা নীচু জমিগুলিতে জল জমেছিল। তাই জাঁক দেওয়ায় কোনও সমস্যা হয়নি। তাই পাটের গুণগত মান ভালোই হবে বলে আশা চাষিদের। 

    কাটোয়া মহকুমাজুড়ে গড়ে ৯৭৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। এরমধ্যে কাটোয়া-১ ব্লকে প্রায় ১৭০, কাটোয়া-২ ব্লকে ৪৬৫, কেতুগ্রাম-১ ব্লকে ৬৫, কেতুগ্রাম-২ ব্লকে ২১৫ ও মঙ্গলকোটে ৬০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। আর পূর্বস্থলী-২ ব্লকে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। কাটোয়া-২ ব্লকের অগ্রদ্বীপ, জগদানন্দপুর, গাজিপুর পঞ্চায়েত এলাকায় বেশি পাট চাষ হয়। কেতুগ্রাম-২ ব্লক এলাকায় সীতাহাটি, মৌগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে বেশি পাট চাষ হয়। সাধারণত পাটের ১২০ দিন বয়সে কেটে জলে জাঁক দিতে হয়। আর বয়স বেড়ে গেলেই অর্থাৎ ১২০ দিনের বেশি হলেই তন্তুর মান ও রং খারাপ হয়। তবে জল বেশি থাকলে পাট ভালো জাঁক দেওয়া যায়। তাতে পাটের গুণগত মান ও রং দুটোই ভালো হয়।

    ভাগীরথী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে বেশি পাট চাষ হয়। কাটোয়ার অগ্রদ্বীপের চরবিষ্ণুপুর গ্রামের পাটচাষি সুশীলকুমার মণ্ডল, মেঘনাথ রাজোয়াড় বলেন, এবার পাট জমিতে জল জমেছিল। সার্বিকভাবে এবার পাট চাষে আশার আলো দেখছি। কারণ আমাদের মূল সমস্যা হয় পাট পচানোর ক্ষেত্রে। এবার সেই সমস্যা হয়নি। লাগাতার বৃষ্টিতে জল জমেছিল খালবিলগুলিতে। তারপর জলে স্রোত থাকায় নোংরা আবর্জনা জমতে পারেনি। তাই পাটের রং এবার ভালো হবে। আশাকরি ভালো দামও পাওয়া যাবে। অগ্রদ্বীপের চাষি বিধান সর্দার, হরি রাজোয়াড় বলেন, গত বছর আমরা অনেকেই পাট জাঁক দেওয়ার জন্য জল পায়নি। পুকুরে মাছ চাষ করায় পাট জাঁক দিতে কেউ রাজি হয় না। আমরা জমিতেই আল বেঁধে দ্বিগুণ টাকা খরচ করে সাবমার্সিবলের জল কিনে  পাটের জাঁক দিতে হয়েছিল। এবার আর সেটা হয়নি। 

    জুট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের কাটোয়া আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গুণগত মান অনুযায়ী দাম পাওয়া যায়। কারণ পাটের গুণগত মান খারাপ হলে মিলগুলি নিতে চাই না। তখন কর্পোরেশনের গোডাউনে ফেলে রাখা ছাড়া উপায় থাকবে না। ২০২৪-’২৫ বর্ষে কাটোয়ায় এক হাজার কুইন্টাল পাট সংগ্রহ করা হয়েছিল চাষিদের কাছ থেকে। তা সত্ত্বেও পাটের অভাবি বিক্রিতেই চাষিদের একটা বড় অংশ ঝোঁকেন।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)