• আইসার গবেষক ছাত্রের আত্মহত্যা, পদ ছাড়লেন অ্যান্টি র‍্যাগিং কমিটি চেয়ারম্যান তথা অভিযুক্ত সুপারভাইজারের স্বামী
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১২ আগস্ট ২০২৫
  • ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার) কলকাতার গবেষক পড়ুয়া অনমিত্র রায়ের আত্মহত্যার ঘটনায় বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সেই বিতর্কে জড়িয়ে এবার ‘ডিন অফ স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স’-এর পদ ছাড়লেন অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, তিনি আইসার-এর অ্যান্টি র‍্যাগিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই কমিটিও ভেঙে ফেলে নতুন করে গঠন করা  হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। একই সঙ্গে ‘ডিন অফ স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স’ পদ থেকেও সরে দাঁড়ালেন অয়ন। তিনি বলেন, ‘আমিও চাই নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে আমার এই পদ থেকে সরে আসা জরুরি মনে করেছি। তাই এই পদত্যাগ।’

    জানা গিয়েছে, এই গবেষক ছাত্রকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই। আইসার সুপারভাইজার অনিন্দিতা ভদ্র এবং অপর এক গবেষক পড়ুয়া সৌরভ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। সূত্রের খবর, সৌরভের বিরুদ্ধে মৃত পড়ুয়া অনমিত্র সুপারভাইজার অনিন্দিতার কাছে অভিযোগ জানালেও তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। পরে অনমিত্র অ্যান্টি র‍্যাগিং কমিটিতে অভিযোগ জানান। সেই কমিটির মাথায় যিনি বসে আছেন, তিনি অনিন্দিতার স্বামী অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে সেখানেও তাঁর অভিযোগের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আর তারপরই ঘটে গেল এই দুঃখজনক ঘটনা। তাই অ্যান্টি র‍্যাগিং কমিটি কতটা নিরপেক্ষ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

    এদিকে অয়নের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ছাত্রদের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা বার বার তাঁকে ওই পদ থেকে অপসারণের দাবি তুললেও এতদিন তাঁকে সরানো হয়নি। এবার বিতর্কের মুখে অ্যান্টি র‍্যাগিং কমিটি ভেঙে ফেলে নতুন করে কমিটি গঠন করতে চলেছে আইসা।

    প্রসঙ্গত, অটিজমে আক্রান্ত ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের বাসিন্দা অনমিত্র। নদিয়ার কল্যাণীতে আইসার কলকাতায় গবেষণা করছিলেন ২৬ বছর বয়সি ওই গবেষক পড়ুয়া। গত বৃহস্পতিবার আইসার-এর এক ল্যাবরেটরির ভিতরেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। পরের দিন শুক্রবার কল্যাণী এমসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে জবানবন্দি হিসেবে একটি চিঠিও লিখে যান। সেখানে তাঁর সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, তিনি সেই সব ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করেছেন। ওই চিঠিতে তাঁর শারীরিক সমস্যার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

    মৃত্যুর আগে ওই জবানবন্দিতে অনমিত্র লিখেছেন, তাঁরই এক সতীর্থ গবেষক তাঁকে বার বার হেনস্থা করতেন। ওই গবেষকের বিরুদ্ধে তাঁদের সুপারভাইজারের কাছে নালিশ করলেও তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। এর পরই আইসার কলকাতার ‘অ্যান্টি র‍্যাগিং’ সেলে অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু তারাও বিষয়টি গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ। তাঁর আরও অভিযোগ, যাঁরা এত দুর্ব্যবহার করেছেন, তাঁদের সঙ্গে সবাইকে খুব স্বাভাবিকভাবে মেলামেশা করতে দেখে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছিলেন। যে গবেষক তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন, তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেটাও হয়নি।

    অনমিত্র লিখেছেন, সুপারভাইজার তাঁকে ‘হেনস্থাকারী’ গবেষক পড়ুয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তিনি ওই গবেষকের কাজ নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। তা নিয়ে অনমিত্র সরব হওয়ায় সুপারভাইজার তাঁর সঙ্গে ফের দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। গবেষক পড়ুয়ার মৃত্যুর পরে শনিবার তাঁর এক আত্মীয় নদিয়ার হরিণঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আইসার কলকাতা কর্তৃপক্ষও এই ঘটনায় পৃথকভাবে একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)