নিউ টাউনের পি কে জি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে জমির চরিত্র বদলের নির্দেশ দিল হিডকো। যার মূল্য হিসাবে হিডকোর তরফে ১২২ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে। দিন ১০-১২ আগে এই মর্মে একটি নোটিস পি কে জি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে বলে হিডকো সূত্রের খবর। ওই মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, হিডকোর আর্থিক দাবি অযৌক্তিক। হিডকো বেআইনি ভাবে এই দাবি করছে।
হিডকোর আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, পি কে জি হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়টি সাত-আট মাস আগে তাঁদের নজরে এসেছে। নিউ টাউনের ডিএইচ ব্লকে রয়েছে ওই হাসপাতাল। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক শিল্পের জন্য নির্দিষ্ট জমিতে সেটি গড়ে তোলা হয়েছে। অভিযোগ, ওইজমির চরিত্র বদলে সেটি ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ জমি হিসাবে না দেখিয়েই হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। যে কারণে ‘নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (এনকেডিএ) পি কে জি গোষ্ঠীর ওই হাসপাতালের ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ করেনি। তারা জানাচ্ছে, গত বছরের মার্চেই ওই হাসপাতালের ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এনকেডিএ জানিয়েছে, হিডকোর তরফে সবুজ সঙ্কেত না পাওয়া অবধি ওই হাসপাতালকে নতুন করে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হবে না। সূত্রের খবর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও অকুপেন্সি সার্টিফিকেট এবং ফায়ার লাইসেন্স নেননি। তা সত্ত্বেও কেন এনকেডিএ সেখানে তাঁদের হাসপাতাল চালাতে দিচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এনকেডিএ-র এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, ওই হাসপাতাল যাতে বিধি মেনে পুরোদস্তুর চালু হয়, তার জন্য হিডকো পদক্ষেপ করছে। তবে, হিডকোর ছাড়পত্র না পেলে হাসপাতালটিকে আমরা নতুন করে ট্রেড লাইসেন্স দেব না।’’
সম্প্রতি ওই হাসপাতালে গিয়ে জানা গেল, ইউএসজি-সহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরীক্ষা সেখানে চলছে। বিভিন্ন পরীক্ষার বিভিন্ন রকম প্যাকেজ। রোগী ভর্তিও করানো হচ্ছে। ৫০ টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন সেখানে রোগী দেখার আউটডোর চলে। ওই হাসপাতালের প্রাক্তন চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, বিভিন্ন অনিয়মের কারণেই সেখানকার চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। এক প্রাক্তন চিকিৎসকের কথায়, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে বলা হয়েছে, ৩০০ শয্যার হাসপাতাল। আর ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট সার্টিফিকেটের জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে ৪২০ শয্যার হাসপাতাল। ফায়ার লাইসেন্স নেওয়া হয়নি। অথচ, যে কোনও ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্টে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা একাধিক বার এ সবের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তাঁরা শোনেননি।’’
হিডকোর এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘সাড়ে চার একরের কিছু বেশি জায়গা জুড়ে ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তৈরি হয়েছেতথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক শিল্পের জন্য নির্দিষ্ট জমিতে। কিন্তু হাসপাতাল চালাতে হলে জমির চরিত্র প্রাতিষ্ঠানিকে বদলাতে হবে।’’ ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স-সহ একাধিক জরুরি কাগজপত্র না থাকা সত্ত্বেও পি কে জি মেডিক্যাল কলেজ কী করে চলছে, অতীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তা জানতে চেয়েছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
হাসপাতালের কর্ণধার প্রদীপকুমার ঘোষ স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তাঁদের ট্রেড লাইসেন্সের নবীকরণ হয়নি। এর জন্য তিনি হিডকোকেই দায়ী করেছেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আমরা কাঠা প্রতি চার লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা করে দিতে চেয়েছি। কিন্তু হিডকো আরও ১০০ কোটি টাকা দাবি করেছে। এই দাবি অযৌক্তিক। এক প্রাক্তন আমলার কথায় দু’বছর আগে আটশো কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু আমাদের সব কাজকর্ম আটকে দেওয়া হচ্ছে। কলেজ চালু করতে পারছি না। পড়ুয়ারা ভর্তি হয়েও ক্লাস করতে পারছেন না। এমনকি, হিডকো থেকে হুমকি এসেছে যে, টাকা না দিলে হাসপাতাল গুটিয়ে চলে যেতে।’’