সল্টলেকে দুর্ঘটনা: সিগন্যালে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে যুবক, পাশ থেকে এসে ধাক্কা গাড়ির, পিষে গেলেন রেলিংয়ে! প্রকাশ্যে সিসিটিভি ফুটেজ
আনন্দবাজার | ১৪ আগস্ট ২০২৫
সিগন্যালে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সৌমেন মণ্ডল। তাঁর এক পাশে ছিল আরও একটি বাইক। আর এক পাশে একটু পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল সাদা রঙের একটি চারচাকা গাড়ি। ঘড়িতে তখন বিকেল পাঁচটা। আচমকা পাশ থেকে সজোরে এসে সৌমেনের বাইকে ধাক্কা মারে একটি কালো গাড়ি। সোজা তাঁকে টেনে নিয়ে যায় রাস্তার পাশের রেলিংয়ে। তার পরেই গাড়িতে বিস্ফোরণ। ঝলসে মৃত্যু হয় সৌমেনের! বুধবার সল্টলেকের দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে ধরা পড়েছে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা।
সল্টলেকের পথ দুর্ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। পুলিশ সূত্রে খবর, দু’টি অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। অনিচ্ছাকৃত খুন এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, ইটবৃষ্টি, হামলার ঘটনা— এই দুই মর্মে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে বুধবার বিকেলের দুর্ঘটনার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও কেন এখনও কাউকে গ্রেফতার করা গেল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে মৃত ডেলিভারি বয়ের পরিবার। পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে তারা।
বুধবার বিকেলে কেষ্টপুর এবং সল্টলেকের মাঝে ৮ নম্বর ব্রিজের কাছে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ডেলিভারি বয় সৌমেনের। চারচাকার একটি গাড়ির সঙ্গে কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ির সংঘর্ষ হয়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারের রেলিংয়ে ধাক্কা মারে চারচাকা। মুহূর্তের মধ্যে গাড়িটিতে বিস্ফোরণ হয় এবং দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। ঘটনাস্থলেই বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সৌমেন। রেলিংয়ের মাঝে আটকে যান তিনি। গাড়ির আগুনে দগ্ধ হয়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
ঘটনার পর থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয়েরা। অভিযোগ, সময় থাকতেও পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে ছিল। যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়নি। সময় যত গড়িয়েছে, পরিস্থিতি ততই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। ঘটনায় বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন বলে খবর। বিক্ষুব্ধ জনতাও পাল্টা পাথর ছুড়তে শুরু করে পুলিশের দিকে। বেশ কিছু ক্ষণ সংঘর্ষ চলেছে দুই পক্ষের মধ্যে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় র্যাফ।
মৃত যুবক দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী ব্লকের নফরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের হিরন্ময়পুর গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার খবর পৌঁছোতেই শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রামে। স্থানীয়দের দাবি, দরিদ্র পরিবারে জন্ম সৌমেনের। তাঁর বাবা তাপস মণ্ডল ভিন্রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। সংসারের হাল ধরতেই ডেলিভারি বয়ের চাকরি নিয়েছিলেন সৌমেন।