• কুকুরের কামড়, গাফিলতি কি তবে প্রশাসনেরই
    আনন্দবাজার | ১৪ আগস্ট ২০২৫
  • কুকুরে কামড়ানোর সমাধান কি কুকুরকে এলাকাছাড়া করা? বাড়তে থাকা জলাতঙ্কের উদাহরণ দিয়ে দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকা থেকে পথকুকুর সরিয়ে ফেলার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে বহু দিনের এই প্রশ্ন নতুন করে উঠতে শুরু করেছে। দেশের শীর্ষ আদালতের এই অবস্থান অবৈজ্ঞানিক বলে মত অনেকেরই। আদালতের এই নির্দেশ ‘অ্যানিম্যাল বার্থ কন্ট্রোল রুল, ২০২৩’-এর পরিপন্থী বলেও দাবি তাঁদের। সেই সঙ্গেই তাঁদের প্রশ্ন, কুকুরের কামড়ের বিপদ এড়াতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় নির্বীজকরণ ও প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে না কেন? কেন কুকুর কামড়াচ্ছে, সেই ভাবনাই বা নেই কেন?

    এ শহরের পশুপ্রেমী থেকে পশু চিকিৎসকদের বড় অংশই প্রশাসনিক গাফিলতির দিকে আঙুল তুলছেন। তাঁদের দাবি, যথাযথ নির্বীজকরণ হচ্ছে না, উল্টে এলাকাছাড়া করে এমন পরিসর তৈরি করা হচ্ছে যাতে কামড়াচ্ছে পথকুকুর।

    পশু চিকিৎসক ঋতব্রত ঘোষ বলছেন, ‘‘সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পথকুকুরের চেয়ে বাড়ির কুকুর কামড়ায় বেশি। পথকুকুর বছরের পর বছর ধরে এই সমাজের অঙ্গ। তারা ভালই জানে, রাস্তায় কাউকে কামড়ালে মারের মুখে পড়বে। উল্টো দিকে বাড়ির পোষা কুকুর বড়ই হয় মনিবকে রক্ষা করার শিক্ষা পেয়ে। তাই তারা যত সহজে কামড়ায়, রাস্তার কুকুর তত সহজে কামড়ায় না।’’

    দীর্ঘদিন কলকাতা পুরসভার ডগ পাউন্ডের দায়িত্ব সামলানো পশু চিকিৎসা কর্মী রাজীব ঘোষ আবার বললেন, ‘‘পথকুকুর কামড়ায় তার পরিস্থিতির জন্য। নির্বীজকরণের জন্য প্রশাসনের গাড়ি কোনও পথকুকুরকে নিয়ে যাওয়ার পরে বহু সময়েই আর আগের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। এমন জায়গায় তাকে ছাড়া হয়, যেখানে সে বেমানান। অন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ের মধ্যে সে তখন মানুষকেও কামড়াতে পারে। ফলে বুঝতে হবে, এলাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পথ কুকুরকে তার এলাকাছাড়া করা সমস্যার সমাধান নয়।’’

    তিনি আরও জানান, নির্বীজকরণের পর একটি কুকুর যন্ত্রণার মধ্যে থাকে। এলাকাছাড়া হওয়ায় আতঙ্ক আরও বাড়ে। অন্যদের সঙ্গে লড়াই করে তখন খাবার পাওয়াও কঠিন হয়। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পথকুকুর কামড়ায়।

    ‘পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস’-এর (পেটা) তরফে হিরাজ লালজানির দাবি, ‘‘এ ব্যাপারে শীর্ষ আদালতের রায় এখনও আপলোড হয়নি। তবে সুপ্রিম কোর্টের এই অবস্থান ২০২৩ সালের অ্যানিম্যাল বার্থ কন্ট্রোল রুল-এর পরিপন্থী। ওই নিয়ম স্পষ্ট বলছে, ভারতীয় কুকুরের প্রজাতিকেই তো শেষ করে দেওয়ার কথা নয়। তাই ৭০ শতাংশ পথকুকুরকে নির্বীজকরণ করাতে হবে ও প্রতিষেধক দিয়ে পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে দিতে হবে।’’

    প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা পশু অধিকার রক্ষা আন্দোলনের কর্মী মানেকা গান্ধী একটি ভিডিয়ো বার্তায় বলেছেন, ‘‘কোনও এলাকা থেকে এ ভাবে জোর করে পথকুকুর তুলে নিয়ে গেলেও সমস্যা মিটবে না। যত ক্ষণ সেখানে খাবার আছে, বাইরে থেকে কুকুর এসে সেই জায়গা নেবে। তাই এ ভাবে সরিয়ে ফেলে মুছে ফেলার চেষ্টা করাটা সমাধান নয়।’’

    পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘পথকুকুর কিন্তু আমাদের বাস্তুতন্ত্রের অঙ্গ। এ ভাবে পথকুকুর সরিয়ে নেওয়ার আগে ভাবতে হবে এর প্রভাব কী পড়বে। এর জেরে কোনও রোগের প্রাদুর্ভাব হবে কিনা, চুরি, ছিনতাই আরও বাড়বে কিনা, সেই গবেষণা করে আগে রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। তার সঙ্গেই দরকার মানুষের ভয় কাটানো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যা শূন্যে নামাতে হবে। পথকুকুর এলাকাছাড়া করে নয়, সেটা সম্ভব এলাকা ধরে ধরে প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)