• ফুলহারের স্রোতে পাঁচ মাসেই ভাঙল কাটাবাঁধ
    আনন্দবাজার | ১৪ আগস্ট ২০২৫
  • ফুলহার নদীর জলের তোড়ে মানিকচকের ভূতনির কাটাবাঁধের একাংশ ভেসে গেল। বুধবার সকাল ছ’টা নাগাদ বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার অংশ ভেঙে গিয়ে হু-হু করে জল ঢুকতে শুরু করে ভূতনিতে। এ দিন যে জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে, গত শুখা মরসুমে সেচ দফতরের তরফে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করে তা সংস্কার করা হয়েছিল। সেই অংশই ফের ভেঙে যাওয়ায় কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব বিরোধীরা। পাল্টা বাঁধ ভাঙা নিয়ে সিপিএম ও বিজেপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র।

    ভূতনি চরের মধ্যে থাকা উত্তর ও দক্ষিণ চণ্ডীপুর এবং হীরানন্দপুর—এই তিনটি পঞ্চায়েতকে ঘিরে রেখেছে গঙ্গা, ফুলহার ও কোশি নদী। গত বছর ভূতনির কেশরপুর কলোনিতে ভাঙা বাঁধের অংশ দিয়ে গঙ্গার জল ঢুকে বন্যা হয়েছিল তিনটি পঞ্চায়েতেই। সে সময় ভূতনির বন্যার জল বের করতে শঙ্করটোলা থেকে দক্ষিণ চণ্ডীপুর যাওয়ার যে বাঁধ রয়েছে, দুর্গারামটোলায় ফুলহার নদীর দিকে থাকা সেই বাঁধের একাংশ কেটে দেওয়া হয়। সেসময় বন্যার জল কাটা অংশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে ফুলহারে পড়ে। মাস ছয়েক আগে এক কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করে বাঁধের সেই ভাঙা অংশে ২০টি হিউমপাইপ বসিয়ে মেরামত করা হয়। এ দিন নবনির্মিত ওই বাঁধের ৫০ মিটার অংশ ভেসে যায়। ওই জল গিয়ে পড়ছে পুলিন ঢাবে। ঢাব ভরে গেলে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গ্রামে-গ্রামে জল ঢুকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

    বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে এই দিন সকালে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন উত্তর মণ্ডলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার গোরাচাঁদ দত্ত, সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ ভট্টাচার্য, মালদহ ডিভিশনের এগ্‌জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শিবনাথ গঙ্গোপাধ্যায়-সহ জেলা সেচ দফতরের একাধিক আধিকারিক। ‘ডিপ ট্রিজ’ পদ্ধতি এবং বালির বস্তা ফেলে জল আটকানোর চেষ্টা শুরু হয় দুপুরের পর থেকে। ঘটনাস্থলে যান জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া, পুলিশ সুপার প্রদীপ যাদব-সহ প্রশাসনের আধিকারিকেরাও। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ভূতনি প্লাবিত হবে আশঙ্কা করে এ দিন দুপুরের পর থেকে ওই তিনটি পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের উদ্ধার করে মানিকচক ব্লকের মথুরাপুর মডেল হাই স্কুলে চালু করা বন্যাত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসা শুরু হয়েছে। সেখানে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। দুর্গতদের ত্রাণ বিলি চলছে।’’

    এই নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবজ্যোতি সিংহ এই দিন এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘বাঁধ তৈরির নামে দুর্নীতি হয়েছে। ওই বাঁধ যখন তৈরি হয় তখনই নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলেছিলাম আমরা। প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। এখন তার ফল ভুগতে হচ্ছে ভূতনির বাসিন্দাদের।’’ এর পাশাপাশি, বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক গৌড়চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘বাঁধ তৈরির নামে কাটমানি ও দুর্নীতি হাওয়ায় পাঁচ মাসের মধ্যে বাঁধ ভেঙে গেল। সরকারি টাকা কী ভাবে নয়ছয় হয়েছে, এ ঘটনা তারই প্রমাণ।’’ মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র অবশ্য বলেন, ‘‘যে ভাবে বাঁধ তৈরি হয়েছিল তাতে ভাঙার কথা না। সিপিএম ও বিজেপি ষড়যন্ত্র করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে রাতের অন্ধকারে কিছু বালির বস্তা সরানোয় চুঁইয়ে জল ঢুকতে শুরু করে। শেষে বাঁধের একাংশ ভেঙে যায়।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)