• মাটিয়ারির মসলিন পেল জিআই তকমা
    আনন্দবাজার | ১৪ আগস্ট ২০২৫
  • কখনও আংটির ভিতর দিয়ে গলে গিয়েছে। আবার কখনও বড় দেশলাইয়ের বাক্সে এঁটে গিয়েছে একটি গোটা কাপড়। মসলিনের কিংবদন্তি সত্যি প্রমাণ করছেন নবদ্বীপের মাটিয়ারি কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানের কারিগরেরা। তাঁদের হাতে বোনা মসলিন সম্প্রতি জিআই রেজিস্ট্রেশন পেল।

    পশ্চিমবঙ্গ খাদি এবং গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের তরফে মসলিনের জিআই তকমার জন্য প্রথম আবেদন জানানো হয় ২০১৯ সালে। তখন রাজ্য খাদি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন নদিয়ার গৌরীশঙ্কর দত্ত। কোভিড কালে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। অবশেষে গত মার্চ মাসে ঐতিহ্যবাহী মসলিন জিআই অনুমোদন লাভ করে। উল্লেখ্য, রাজ্য খাদি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যানও নদিয়ার, কল্লোল খাঁ।

    ৩০০ থেকে ৫০০ কাউন্টের অতি সূক্ষ মসলিনের জন্য জিআই তকমা পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ খাদি এবং গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ। সংস্থার চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার তথা রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত সচিব মৃদুল হালদার বুধবার নবদ্বীপে বলেন, ‘‘জিআই তকমা খাদি বোর্ড পেয়েছে। রাজ্যে আমাদের চারটি নিজস্ব উৎপাদন কেন্দ্র আছে— নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং বীরভূম। তবে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫০০ কাউন্টের অতি সূক্ষ্ম মসলিন সুতো প্রধানত নবদ্বীপের মাটিয়ারি কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানেই উৎপাদন হচ্ছে। জিআই মসলিন উৎপাদকদের আর্থিক সাফল্য সুনিশ্চিত করবে।”

    মসলিন এক আশ্চর্য শাড়ি। বাংলার তাঁতের অহংকার। মসলিন তাঁতিদের আঙুলের ইন্দ্রজালে মাকড়সার জালের মতো অদৃশ্য প্রায় সুতোর টানাপড়েনে বারে বারে ‘বেআব্রু’ হয়েছে রোম সুন্দরী থেকে মুঘল সাম্রাজ্ঞীর সৌন্দর্য। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর গ্রিসে কিংবা মিশরের মমির শরীরে মিলেছে সূক্ষ মসলিন। কিংবদন্তীর মসলিন ব্রিটিশ রাজত্বে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। সুদীর্ঘ চেষ্টায় ফের নতুন করে রূপ পাচ্ছে মসলিন। সূক্ষতার নিরিখে এখনও পর্যন্ত সে কাজে সবার আগে নবদ্বীপের মাটিয়ার কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান। যার কাটুনি থেকে বুনন শিল্পী, প্রায় প্রত্যেকেই রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। সম্পাদক শুভাশিস চক্রবর্তী জানান, ২০১০ সালে প্রয়াত মুরারি চক্রবর্তীর আমলে পরীক্ষা-পর্ব শুরু হয়। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় এক দশকের চেষ্টায় ৫০০ কাউন্টের মসলিন তৈরিতে আমরাই প্রথম সফল হই। এখন বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন হচ্ছে শাড়ি। জিআই পাওয়াতে অনেকটা নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।” তবে মসলিনের উৎপাদন পদ্ধতি সবটাই প্রকৃতি নির্ভর। দক্ষিণ ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকায় উৎপন্ন হয় বিশেষ সুভিন কাপাস তুলো। দামও মানানসই। সাদা মসলিনের শাড়ির দাম ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু। রঙিন মসলিনের শাড়ির সর্বনিম্ন দাম ৪৫ হাজার টাকা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)