• মুসলিম লিগের পতাকা সরিয়ে বালুরঘাটে তোলা হয়েছিল তেরঙ্গা
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
  • গোপাল সূত্রধর , বালুরঘাট: ১৫ আগস্ট নয়, বালুরঘাট তথা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল ১৮ আগস্ট। সারাদেশ যখন ১৫ আগস্টের দিন উল্লাসে মেতে উঠেছিল, তারপরও দু’দিন চরম উত্কণ্ঠায় ছিল বর্তমান দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। বিষাদের সুর ছিল জেলাবাসীর মনে। কারণ, তখনও স্বাধীনতা অর্জন করেনি বালুরঘাট। বালুরঘাট তখন রাজশাহী বিভাগের দিনাজপুরের একটি অংশ। বালুরঘাট সহ সংলগ্ন অঞ্চল বাংলাদেশের অধীনে প্রায় যায় যায়। 

    একদিকে, বালুরঘাটকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে দিল্লিতে তোড়জোড় শুরু করেছিলেন কংগ্রেস নেতারা। অন্যদিকে, মুসলিম লিগের নেতারা বালুরঘাটে প্রশাসনিক ভবনে ব্রিটিশ জ্যাক ইউনিয়ন পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানের পতাকা তুলে দিয়েছিল। তিনদিন ধরে চলে ক্ষোভ, উত্তেজনা, অস্থিরতা, প্রতিরোধ। অবশেষে বালুরঘাটের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় ১৮ আগস্ট আসে সেই বহু প্রতীক্ষিত আনন্দের মুহূর্ত। খুশি, আনন্দ-উল্লাসে ওঠে বালুরঘাট।

    কংগ্রেস নেতৃত্ব ও স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বালুরঘাটে বের করেন বিশাল মিছিল। সেইদিনটিকে স্মরণে রেখে এবারও ১৮ আগস্ট বালুরঘাটে উদযাপিত হবে ‘স্বাধীনতা দিবস’। তার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে শহরজুড়ে। 

    বালুরঘাটের ইতিহাসবিদ সমিত ঘোষ বলেন, বালুরঘাটের ইতিহাসে ১৯৪৭ সালের ১৮ আগস্ট দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন বালুরঘাটবাসী প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল। ১৮ আগষ্ট শুধু বালুরঘাট নয়, দিনাজপুরের ইতিহাসেও একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। তিনদিন এই শহরে টানটান উত্তেজনা ছিল। সেদিন বালুরঘাট শহরের হাইস্কুল মাঠে বিশাল জমায়েত হয়েছিল। আজও এই দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়। 

    বালুরঘাট পুরসভার এমসিআইসি তথা বালুরঘাট হাইস্কুলের শিক্ষক বিপুলকান্তি ঘোষ বলেন, ১৮ আগস্ট নিয়ে বালুরঘাটবাসীর মধ্যে প্রবল আবেগ রয়েছে। আমরা এই দিনটিকে এবছর বিশেষভাবে পালন করতে চাইছি। 

    বালুরঘাটের সংস্কৃতিপ্রেমী তুহিনশুভ্র মণ্ডল বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উৎসর্গ করে আমরা সাইকেল র‍্যালি করব। ১৮ আগস্ট ১৯৪৭ সালে বালুরঘাট হাইস্কুল মাঠে সরোজ রঞ্জন চট্টোপাধ্যায় পতাকা তুলেছিলেন। সেখানেই আমরা পতাকা তুলে ১৮ আগস্টের মাহাত্ম্য তুলে ধরব। 

    প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করলেও বালুরঘাট ও তৎ সংলগ্ন কিছু অঞ্চল ন্যাশনাল এরিয়া হিসাবে চিহ্নিত হয়। এই এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। বালুরঘাটের প্রশাসনিক ভবনে কে পতাকা উত্তোলন করবে,তা নিয়ে টানাপোড়েন তৈরি হয়। অবশেষে প্রশাসনিক ভবনে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করে মুসলিম লিগের নেতারা। বালুরঘাটের কংগ্রেস নেতারাও দিল্লিতে দরবার শুরু করে। তিনদিন চলে টানাপোড়েন।  এর মধ্যে গোর্খা রেজিমেন্টের সেনারা বালুরঘাট উচ্চ বিদ্যালয় দখল নিতে গেলে পাঠান ও বেলুচ রেজিমেন্টের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। 

    হিলিতেও দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। বালুরঘাট শহরে টহল দিচ্ছিল পাকিস্তানি খানসেনা। অবশেষে ১৮ আগস্ট সকাল ৭ টায়, ডাউন নর্থবেঙ্গল এক্সপ্রেসের সংযোগকারী বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ায়। বাস থেকে নামেন স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা কংগ্রেস নেতা সরোজরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, মহারাজা বসু, শৈলেন দাস সহ আরও অনেক নেতা।  তাঁরা এসে ঘোষণা করেন, বালুরঘাট স্বাধীন, ভারতের অংশ। 

    প্রশাসনিক ভবনে তোলা হয় জাতীয় পতাকা। বিকেলে বের হয় বিরাট মিছিল ও বালুরঘাট হাইস্কুল মাঠে জমায়েত।
  • Link to this news (বর্তমান)