• আন্দামানের সেলুলার জেলে জীবনের সোনালি দিন অতিবাহিত করেন স্বাধীনতা সংগ্রামী যোগেশচন্দ্র দাস
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
  • সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: স্বাধীনতা আন্দোলনের সেই উত্তাল সময়ে বাংলা মায়ের কত যে দামাল ছেলে নিজের জীবন তুচ্ছ করে দেশ মাতৃকার শৃঙ্খলমোচনে ব্রতী হয়েছিলেন তার ইয়ত্তা নেই। জীবন উৎসর্গ করা, ব্রিটিশের কারাগারের অন্ধকার কুঠুরিতে বন্দি জীবনযাপন, অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে তাঁদের। হয়েছে কালাপানি নির্দেশ। সুদূর আন্দামানের সেলুলার জেলে কেটে গিয়েছে জীবনের সোনালি দিনগুলি। তেমনই এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম যোগেশচন্দ্র দাস। যিনি ১৯৩৪ সালে গাইবান্ধা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হন। পরবর্তীতে বিভিন্ন জেল ঘুরে তাঁর স্থান হয় আন্দামানের সেলুলার জেলে। দীর্ঘ কারাবাসের পর তিনি পরবর্তীতে আবার অধুনা বাংলাদেশের গাইবান্ধায় ফিরে এসেছিলেন। পরে তাঁর পরিবার পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। সেখানে তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখনও আছেন। ২০০০ সালের ২৫ মার্চ দিনহাটা শহরে নিজ বাসভবনে ৮৯ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। স্ত্রী কল্পনা দাস, দুই মেয়ে, দুই ছেলে নিয়ে সেখানেই জীবনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। ১৯৭২ সালে ভারত সরকার কর্তৃক তাম্রপত্র প্রাপ্ত হন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে তিনি আন্দামানে অন্যান্য বিপ্লবীদের সঙ্গে আমন্ত্রিত হন। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান।

    বিপ্লবী যোগেশ চন্দ্র দাসের ছোট ছেলে শুভাশিস দাস বলেন, ১৯৩৪ সালে গাইবান্ধা ষড়যন্ত্র মামলায় ব্রিটিশ পুলিসের হাতে বাবা বন্দি হয়েছিলেন। গাইবান্ধা, রাজশাহী, দমদম জেল হয়ে তাঁকে আন্দামানের সেলুলার জেলে পাঠানো হয়। সেখানে বিপ্লবী গণেশ ঘোষ সহ আরও অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি গাইবান্ধায় ফিরে এসেছিলেন। পরবর্তীতে দিনহাটায় চলে আসেন। সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ না দিলেও বামপন্থী মানসিকতা নিয়ে সমাজ সেবায় ব্রতী ছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষ্যে আমি বাবার সঙ্গে আন্দামান সেলুলার জেলে গিয়েছিলাম। সেখানে বাবার নাম ১৪৫ নম্বরে লেখা রয়েছে। বাবা যে সেলে বন্দি ছিলেন সেই সেলে তাঁকে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলেছিলাম। যা আমার জীবনের দুর্লভ অভিজ্ঞতা। বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন পেতেন। নিজের জমি ও ব্যবসা ছিল।

    যোগেশবাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অধুনা বাংলাদেশের রংপুর জেলার গাইবান্ধা মহকুমার পাঠানডাঙায় তাঁর জন্ম। গ্রাম থেকে তিনি গাইবান্ধায় পড়াশুনোর জন্য গিয়েছিলেন। সেখানেই কম বয়সে তিনি অনুশীলন দলে যোগ দিয়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি গাইবান্ধা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িয়ে যান। তিনি অস্ত্র রাখার দায়ে অভিযুক্ত হন। বাড়ির নারকেল গাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করে ব্রিটিশ পুলিস। এরপরেই শুরু হয় কারাবাসের জীবন। যা শেষ হয় আন্দামানের সেলুলার জেলে গিয়ে। ব্রিটিশ ভারতের সেই অগ্নিযুগের সন্তানের সমস্ত স্মৃতি আজও আগলে রেখেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। 

       যোগেশচন্দ্র দাসকে সংবর্ধনা। - ফাইল চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)