• স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতি আজও বহন করছে বিদ্যাশ্রম
    বর্তমান | ১৫ আগস্ট ২০২৫
  • উজ্জ্বল রায়, ধূপগুড়ি: স্বাধীনতার কয়েকদশক পরে এসেও স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতিগুলি অম্লান। ধূপগুড়ি বিদ্যাশ্রম এমনই এক স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিচিহ্ন, যার প্রতিটি ছত্রে জড়িয়ে রয়েছে মৃত্যুহীন প্রাণের ইতিহাস। স্বাধীনতার আগে বিপ্লবীরা গা ঢাকা দিতেন এখানে এসে। তাঁদের হাতেই তৈরি হয় এই বিদ্যাশ্রম। 

    ধূপগুড়ি শহর সংলগ্ন বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের এই বিদ্যাশ্রম আজ পড়ে রয়েছে অবহেলায় অনাদরে। দেয়ালে ধরেছে ফাটল। ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে ঐতিহাসিক এই আস্তানা। কিন্তু এখনও এই আশ্রম আগলে রয়েছে বিপ্লবীদের মতাদর্শে বিশ্বাসী গৌরি ঘোষ। তিনি সন্ধ্যা হলে আশ্রমের প্রদীপটি জ্বালান। তবে মনে দুঃখ একটাই, তাঁর মৃত্যুর পর আশ্রমের ভিতর প্রদীপ জ্বালাবে কে? 

    আন্দোলনকারীদের আস্তানা হিসেবে ধূপগুড়ির প্রত্যন্ত নিরিবিলি গ্রামে এই আখড়া গড়ে তুলেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত। পরবর্তীতে আরও বিভিন্ন জায়গার বিপ্লবীরা এখানে এসে গা ঢাকা দিতে শুরু করেন। এই আস্তানায় ছিলেন শান্তিরঞ্জন চক্রবর্তী, রাখালচন্দ্র দে, কুমারেশ ঘোষ, যাত্রামোহন দাসের মতো বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী। 

    রাখালচন্দ্র দে আন্দামান এবং কারোয়ার জেলে ইংরেজদের হাতে বন্দি ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে বিপ্লবী ধীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত বাংলাদেশের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে এখানে ২০০ বিঘার মতো জমি ক্রয় করে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। বিপ্লবী কুমারেশ ঘোষের ভাগনি গৌরি ঘোষ। যিনি কলকতার সম্ভ্রান্ত পরিবারে একজন ডাক্তারের মেয়ে। বিএসসি’র পর নার্সিং করে একটি সরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। তিনি মামার হাত ধরে ছুটে আসেন এই আশ্রমে। ১৯৮৫ সাল নাগাদ আশ্রমের ভিতর পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় হরিজন স্কুল। সেই স্কুলেই গৌরীদেবী শিক্ষিকার কাজ নেন। পরবর্তীতে আশ্রমকে ভালোবেসে আর কালকাতায় ফেরেননি। সেই সময় এখানে তাঁত বোনা হতো, সেই তাঁতের কাপড়ই পরতেন। পাশাপাশি এই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্যোগ নেন। এখনও এই বিদ্যাশ্রমেই রয়ে গিয়েছে অতীতের সেই নিদর্শনগুলি। রয়েছে চরকা, তাঁতঘর সহ অনেক কিছু। বর্তমানে আশ্রমটির ভাঙাচোরা অবস্থা।‌ একটা সময়ে ‌যে আশ্রমে নুন আর করোসিন তেল ছাড়া কিছুই কিনতে হতো না। যেই আশ্রমের তাঁত কলকাতার খাদি ভবনে যেত। এখন সেই আশ্রমটির বেহাল দশা। আশ্রমের পরিচালন কমিটির বর্তমান সভাপতি দেবপ্রসাদ রায় বলেন, আমরা চাই সরকারি উদ্যোগে বিপ্লবীদের ঘরগুলি সংস্কার করা হোক এবং বিপ্লবীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলি সংরক্ষণ করা হোক। 

    এখনও আশ্রমটি আগলে রেখেছেন গৌরীদেবী। তাঁর মনে দুঃখ একটাই তাঁর মৃত্যুর পর আশ্রমে প্রতিদিন সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাবেন কে? গৌরীদেবী বলেন,  বিপ্লবীর স্মৃতি যেন মুছে না যায়।‌ 

    ধূপগুড়ি বিদ্যাশ্রম ঘিরে স্বপ্নও রয়েছে। সম্ভাবনাও রয়েছে। সরকারের তরফে যদি সঠিকভাবে এই আশ্রম রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় তাহলে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি এটিও একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত কেন্দ্রটি আরও মর্যাদা পাক, স্বপ্ন ধূপগুড়িবাসীর।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)